শীতের শুরুতেই পরিযায়ী পাখিদের ভিড় ঘাটালে। নিজস্ব চিত্র
জমিয়ে শীত পড়ার আগেই ঘাটালের হরিসিংহপুরের ঝিলে হাজির হল পরিযায়ী পাখির দল। ‘বুলবুলের’ আগেই এ বার কিছু কিছু পাখি আসতে শুরু করেছিল। এই ক’দিনে ঝিলের একটা বড় পরিমাণ অংশ দখলে নিয়েছে শীতের অতিথিরা। সঙ্গে শামুকখোল, জল মোরগও এসেছে। এতেই খুশি ঘাটালের পক্ষীপ্রেমীরা। আগন্তুকদের দেখতে জমছে ভিড়ও।
দক্ষিণবঙ্গে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম পছন্দের আস্তানা হিসাবে পরিচিত হাওড়ার সাঁতরাগাছির ঝিল। ঘাটাল শহর ঘেঁষা হরিসিংহপুর পার্কের ঝিলে ২০১২ সালে প্রথম আসে পরিযায়ীরা। মাঝে ঝিলের পরিবেশজনিত কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল ভিন দেশের এই অতিথিদের। সেই সময় পার্কের কাছে ঘাটাল পলিটেকনিক কলেজের ভবন তৈরি হচ্ছিল। তার জেরে অসুবিধায় পড়েছিল পরিযায়ী পাখির দল। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই তারা ঘাটাল ছেড়েছিল। উদ্বেগে পড়েছিল বন দফতরও। গত বছর থেকে ফের স্বাভাবিক নিয়মে আসতে শুরু করে তারা। তবে বছর দুয়েক আগে ঝিলের কিছু দূরে অন্য একটি জলাশয়ে তারা নতুন আস্তানা তৈরি করে। এ বারও সেখানেই এসে উঠেছে কয়েকশো পাখি।
বন দফতর সূত্রের খবর, প্রথম যখন পরিযায়ীরা ঘাটালের ঝিলে এসেছিল, তখন নিবির্ঘ্নেই কেটেছিল সে বারের সফর। কিন্তু সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমতে শুরু করে এলাকায়। পাল্টে যাওয়া পরিবেশেও এসেছিল হাজার হাজার পরিযায়ী। তা দেখে বন দফতর ঘাটালের ঝিলটিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করে। পরিযায়ী পাখিদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু পদক্ষেপও করেছিল বন দফতর। প্রথম দু’চার বছর শিকারিদের জব্দ করতে পাহারার ব্যবস্থা হয়েছিল। ঝিলের পাশেই হরিসিংহপুর পার্ক। শীতের মরসুমে পিকনিক করতে আসা লোকজনদের সতর্ক করা হয়েছিল। ঝিলে মাছ ধরাও নিষিদ্ধ করে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতি। উচ্চস্বরে মাইক বাজানো, ঝিলের দূষণ ঠেকাতেও পদক্ষেপ করা হয়েছিল। কারণ, এরা জলজ উদ্ভিদ খায়। এছাড়াও ছোট ছোট মাছ, গেঁড়ি-গুগলিও খেয়েই বেঁচে থাকে পরিযায়ী পাখিরা। দূষণ মুক্ত পরিষ্কার জলই এদের বেশি পছন্দের।
পক্ষীপ্রেমী ও ঘাটালের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রথমের দিকে নজরদারি শুরু হলেও এখন আর সে সবের বালাই নেই। এখন ঝিলে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিকারিরা। পিকনিকের পর থার্মোকলের থালা-বাটি, প্লাস্টিক গিয়ে জমা হয়। মাইক-বক্সের দাপট তো আছেই। শুরু হয়েছেঝিলে মাছ ধরাও। খড়্গপুরের এডিএফও অভিজিৎ কর অবশ্য বলছেন, “বন দফতর সতর্ক। পোস্টার, মাইকিং করে প্রচার শুরু হয়েছে। ঝিলে পাহারা সহ নজরদারি চলছে ।”