Migrant labour

রাজ্যে কাজ কই? ফিরতে নারাজ পরিযায়ীরা

শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, সরকার আগে ঠিক করুক পরিযায়ী শ্রমিকদের কী কাজে দেবে। তারপর ফেরার সিদ্ধান্ত। জেলা ভিত্তিক কাজের তালিকা প্রকাশের দাবিও তুলেছে তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৬
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের রাজ্যের তরফে বিমা করার কথাও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠনের প্রশ্ন— এই রাজ্যে কাজ কোথায়!

Advertisement

বুধবার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এবার থেকে কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে সরকার দু’লক্ষ টাকা দেবে। আহত হলে মিলবে ৫০ হাজার টাকা। পরিযায়ীদের বিমা করবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী ওইদিন পরিযায়ী শ্রমিকদের এ রাজ্যে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় কাজের কোনও দিশা দেখছেন না পরিযায়ী শ্রমিকরা।

শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, সরকার আগে ঠিক করুক পরিযায়ী শ্রমিকদের কী কাজে দেবে। তারপর ফেরার সিদ্ধান্ত। জেলা ভিত্তিক কাজের তালিকা প্রকাশের দাবিও তুলেছে তারা। প্রায় দেড় দশক ধরে চেন্নাইয়ে ফুলের কারিগর হিসাবে কাজ করছেন পাঁশকুড়ার পূর্ব বাকুলদা গ্রামের সুকুমার মণ্ডল। তিনি বলছেন, ‘‘পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকতে কি আর মন চায়! কিন্তু এ রাজ্যে কাজ কোথায়? রাজ্য সরকার আমাদের জন্য কাজের কী ব্যবস্থা করছে আগে এটা ঘোষণা করুক। তখন ভেবে দেখা যাবে রাজ্যে ফিরব কি না।’’ কোলাঘাটের কার্তিক ভৌমিক কাঠের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘১০ বছর ধরে কেরলে আসবাব তৈরির কাজ করি। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের রাজ্যে ফেরার আবেদন করেছেন। উনি ঋণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আমি এখনও নিশ্চিত হতে পারছি না সত্যিই ঋণ পাব কি না। তাছাড়া, আমাদের রাজ্যে কাজের বাজার নেই।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে লকডাউনে ভিন্‌ রাজ্য থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে ফিরেছিলেন। তাঁদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য সে সময় পরিযায়ী শ্রমিক সমিতি নামে একটি সংগঠন গড়ে ওঠে। সংগঠনের হিসাব বলছে, করোনা পর্বে প্রায় এক কোটি শ্রমিক রাজ্যে ফিরেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় ৭০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক সে সময় ফিরেছিলেন। শ্রমিক সমিতির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার শ্রমিকদের জন্য একটি পোর্টাল খোলে। সেখানে শ্রমিকেরার নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। সে সময়ও রাজ্যের তরফে জানানো হয়, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত অক্ষমতা বা মৃত্যু হলে তাদের পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু তারপরও কাজের সন্ধানে শ্রমিকদের ভিন্‌ রাজ্যে যাওয়া আটকাতে পারেনি রাজ্য সরকার।

এখন মমতার নতুন ঘোষণাতেও চিঁড়ে ভিজছে না শ্রমিকদের মনে। পরিযায়ী শ্রমিক সমিতির উপদেষ্টা নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘বুধবার প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত রাজনৈতিক বক্তৃতা করলেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের উনি কী ধরনের কাজে লাগতে চান, কোন জেলায় কত পরিমাণ শ্রমিক প্রয়োজন এসব কোনও তথ্য ওঁর বক্তব্যে নেই। যে বিমার কথা উনি বলছেন তার সুবিধা তো মিলবে শ্রমিকের মৃত্যুর পর। জীবদ্দশায় পরিযায়ীরা কী পাবে? সরকার প্রকৃত কাজের দিশা দেখাক।’’ এ ব্যাপারে জেলা শ্রম দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের পোর্টালের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে রাজ্যের তরফে। দুয়ারে সরকার শিবিরেও পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। আমাদের হাতে তালিকা আসার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিভিন্ন কাজে লাগানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement