মেডিক্যালের শিশু ওয়ার্ডে বিধায়ক জুন মালিয়া। নিজস্ব চিত্র
শিশুদের মধ্যে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এটি ভাইরাল ফিভার। তবে জ্বরের সঠিক কারণ খুঁজতে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, ‘‘ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যানেল হচ্ছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার টাইপগুলি চিহ্নিত করা হবে। কিট এসে গিয়েছে। পরীক্ষা শুরু হচ্ছে।’’ অধ্যক্ষ জুড়ছেন, ‘‘ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, এনসেফ্যালাইটিস— সব আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা হয়ে যাচ্ছে। কোনও বাচ্চা জ্বর নিয়ে ভর্তি হলে করোনা পরীক্ষা করছি। পাশাপাশি, এ সব পরীক্ষাগুলিও করছি। এতে ঠিক কী কারণে জ্বর হচ্ছে, সেটা বোঝা যাবে। সেই মতো চিকিৎসা করা যাবে।’’
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জ্বর আলাদা কোনও রোগ নয়। বরং একে লক্ষণ বলাই শ্রেয়। মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তারাপদ ঘোষের কথায়, ‘‘নানা কারণে জ্বর আসতে পারে।’’ কখনও খুব সাধারণ কারণে জ্বর হতে পারে। কখনও বা এর পিছনে জটিল কোনও অসুখ থাকে। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘বাচ্চাদের যেটা হচ্ছে সেটা ভাইরাল ফিভারই। হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়েও বাচ্চারাও আসছে। নেবুলাইজ়র ব্যবহৃত হচ্ছে কারও ক্ষেত্রে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখানে চিকিৎসাধীন কারও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি হয়নি।’’ তবে জ্বরে আক্রান্ত শিশু বাড়ছে। পরিস্থিতি দেখে ‘ফলোআপ ক্লিনিক’ তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। বহির্বিভাগের কাছে এই ক্লিনিক হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে জ্বর নিয়ে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৬০ জনেরও বেশি শিশু। বুধবারই নতুন করে ভর্তি হয়েছে ২৬ জন। দিন তিনেকের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৬৬ জন। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ৮ জন। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলায় কয়েকজন শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এটা ভাইরাল ফিভার।’’ করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা বেশি রকম আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ফলে, এত শিশুর জ্বর আশঙ্কা বাড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যেও। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অবশ্য জানাচ্ছেন, ‘‘শিশুদের মধ্যে যারা জ্বর নিয়ে আসছে, তাদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে।’’ তাঁর অনুমান, যে ভাইরাসগুলি শিশু শরীরে ঢুকে সমস্যা তৈরি করছে, তার মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ অ্যান্ড বি, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএস ভাইরাস), প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, মেটানিউমো ভাইরাস প্রভৃতি থাকতে পারে।
মেডিক্যালের শিশু ওয়ার্ডের সব শয্যাই ভর্তি। জেলার অন্য হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডও ভর্তি হয়ে যাচ্ছে জ্বরে আক্রান্ত শিশুতে। মেডিক্যালের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ওষুধ যাতে দ্রুত কাজ করা শুরু করে, তাই নেবুলাইজ়ার ব্যবহার করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে ক্ষেত্র বিশেষে। প্রয়োজনে শিশুকে পিকু-তে রাখা হচ্ছে। তেমন ক্ষেত্রে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর সাপোর্টও দিতে হচ্ছে।
করোনা আতঙ্ক রয়েছেই। দোসর হয়েছে নানা ভাইরাস। নমুনা পরীক্ষা তাই জ্বরের সঠিক কারণ জানার বন্দোবস্ত হচ্ছে। কারণ কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হতে পারে, কেউ ম্যালেরিয়ায়, কারও জ্বরের কারণ আবার অন্য ভাইরাসও হতে পারে। মেদিনীপুরের এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, ‘‘বাচ্চার জ্বর হলে বাড়িতে ফেলে রাখা ঠিক নয়। দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে।’’