শিলদার ইএফআর শিবিরে মাওবাদী হামলার পরের চিত্র। — ছবি: রয়টার্স।
শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলার ঘটনায় বাকি ১০ জনকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন বিচারক। বুধবার এই মামলায় দোষী ১৩ জনকে যাবজ্জীবনের সাজা শুনিয়েছিলেন মেদিনীপুর অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা আদালতের বিচারক সেলিম শাহী।
বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয় বাকি ৯ জনকে। দোষী বুদ্ধেশ্বর মাহাতো অসুস্থ। তাই বৃহস্পতিবার সকালে মেদিনীপুর জেলে গিয়ে তাঁর বক্তব্য শোনার পর সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। শিলদার ঘটনায় ২৩ জনের সাজা ঘোষণা হওয়ায় খুশি নিহতদের পরিবার। বুদ্ধেশ্বর মাহাতের আইনজীবী অলোক মণ্ডল বলেন, ‘‘আসামিদের রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা যেন দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা সাজানো হয়েছে। উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে।’’ সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মাইতি বলেন, ‘‘বিচারক ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার আরও ১৩ জনের সাজা ঘোষণা করেছিলেন।’’
বৃহস্পতিবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা হয় রঞ্জন মুন্ডা, লোচন সিংহ সর্দার, চুনারাম বাস্কে, আশিস মাহাতো, বিষ্ণু সরেন, রামসাই হাঁসদা, অর্ণব দাম, ধৃতিরঞ্জন মাহাতো, বুদ্ধেশ্বর মাহাতো এবং প্রশান্ত পাত্রের।
২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিপিআই মাওবাদীর একটি গেরিলা স্কোয়াড হামলা চালিয়েছিল শিলদা স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া ইএফআর শিবিরে। ২৪ জন ইএফআর জওয়ানকে হত্যা করার পাশাপাশি, শিবির থেকে ইনসাস এবং অ্যাসল্ট কালাশনিকভ (একে) সিরিজের একাধিক আধুনিক রাইফেল, কার্বাইন-সহ প্রচুর অস্ত্রও লুট হয়েছিল সে দিন। সেই ঘটনায় মঙ্গলবারই ২৩ জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। বুধবার দোষীদের মধ্যে ১৩ জন— মানস মাহাতো, রাজেশ হাঁসদা, শুকলাল সরেন, কানাই হাঁসদা, শান্তনু সরেন, শ্যামচরণ হাঁসদা, কল্পনা মাইতি (অনু), রাজেশ মুন্ডা, মনসারাম হেমব্রম, ঠাকুরমণি হেমব্রম (তারা), ইন্দ্রজিৎ কর্মকার, কাজল মাহাতো এবং মঙ্গল সরেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন বিচারক। বৃহস্পতিবার বাকি ১০ জনের সাজা ঘোষণা হল। বাকি ১০ জনের মধ্যে ন’জন আদালতকক্ষে হাজির ছিলেন। বুদ্ধেশ্বরের অসুস্থতার জন্য মেদিনীপুর জেলেই ছিলেন। বিচারক সেখানে গিয়েই তাঁর বক্তব্য শোনেন এবং তার পর সাজা ঘোষণা করেন।
রায় নিয়ে খুশি নয় মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর জানিয়েছেন, শিলদা মামলায় রাজনৈতিক বন্দিদের গণ-যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ স্ট্রিটে প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়েছে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন দোষীদের আইনজীবীরা।