শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়ে শুরু নজরদারি। — ফাইল চিত্র।
শিশুদের মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। রাজ্যের নির্দেশে বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। নজরদারির আওতায় রয়েছে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (এআরআই) উপসর্গযুক্ত শিশুরা এবং ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস’ (আইএলআই) উপসর্গযুক্ত শিশুরা। পরিস্থিতির জন্য আবহাওয়ার বদল থেকে ইমিউনিটির সমস্যাকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকেরা।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘কিছু শিশুর জ্বর হয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেলার সার্বিক পরিস্থিতির উপরেই নজর রাখা হয়েছে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘শিশুদের জ্বর নিয়ে এখনই উদ্বেগের কিছু নেই। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিকই রয়েছে।’’ রবিবার থেকে বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। কোন হাসপাতালে কত শিশু জ্বর নিয়ে ভর্তি রয়েছে, কার কী উপসর্গ, সবই নজরদারির আওতায় রয়েছে। অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেই এই বিশেষ নজরদারি। যে ভাবে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, তাতে চিন্তার ভাঁজ স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের কপালে। হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটেও কিছু শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে শিশুদের এই জ্বর নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকদের অনেকেই।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতেই ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (এআরআই) এবং ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস’ (আইএলআই) উপসর্গযুক্ত শিশুদের ব্যাপারে হাসপাতালগুলি থেকে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।
এআরআই কী?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এআরআই বলতে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রঙ্কাইটিস, ব্রঙ্কুইলাইটাস, নিউমোনিয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বলা যায় একে।’’ এআরআইয়ের কিছু শিশু বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
আইএলআই কী? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনে’র সঙ্গে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি জ্বর ও কাশি থাকলে তা আইএলআই হিসেবে বিবেচিত হয়। জেলার এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও মানছেন, ‘‘এই সময়ে এআরআই, আইএলআই উপসর্গযুক্ত শিশুদের নজরে রাখাটা খুবই জরুরি।’’ জানা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রামেগঞ্জে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, ‘‘কিন্তু একসঙ্গে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছে বা কোনও গ্রামে অনেকেই জ্বরে ভুগছে, এমন কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।’’
শিশুদের জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ সম্পর্কে নির্দেশিকা (গাইডলাইন) রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। জেলা থেকে তা ব্লকে ব্লকে পাঠানো হয়েছে। আক্রান্ত শিশুর পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি, তার ঘরোয়া চিকিৎসা এবং কী ভাবে বিপদের পূর্বাভাস বুঝে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে, তা জানানো রয়েছে ওই নির্দেশিকায় বলেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘কিছু শিশুর ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে কেউ কেউ।’’ আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘আবহাওয়ার পরিবর্তন সহ নানা কারণে এ ধরনের রোগে ভোগে কেউ কেউ। সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে।’’ কোনও রকম বিপদ-লক্ষণ থাকলে অবিলম্বে শিশুকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত, মনে করাচ্ছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা।