শহরে অব্যাহত বড় নোটে ‘বড়’ দুর্ভোগ

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৩৭০টি এটিএম রয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগ এটিএমেই খুচরো নোটের আকাল রয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
Share:

একশো তো প্রায় নেই-ই, পাঁচশোও মেলে কদাচিৎ। অধিকাংশ এটিএম থেকেই মিলছে দু’হাজার টাকা। আর সেই নোট ভাঙাতে গিয়ে ফাঁপরে পড়ছেন মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দারা। নোটবন্দির এক বছর পরেও রেহাই মেলেনি দুর্ভোগ থেকে!

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৩৭০টি এটিএম রয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগ এটিএমেই খুচরো নোটের আকাল রয়েছে বলে অভিযোগ। মেদিনীপুরের বটতলাচকের কাছে এক ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা তুলতে এসেছিলেন সুরঞ্জনা দত্ত। এক হাজার টাকা তোলার জন্য এটিএম মেশিনে কার্ড ঢোকান তিনি। সুরঞ্জনা অবশ্য এটিএম থেকে এক হাজার টাকা তুলতে পারেননি। ওই এটিএমে দু’হাজার টাকার নোট ছাড়া আর কোনও নোট ছিল না। অগত্যা খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। সুরঞ্জনা বলছিলেন, “শুধু এক- দু’বার নয়, এমন সমস্যা প্রায়ই হয়। শহরের এটিএমে প্রায়শই শুধু বড় নোট থাকে। ছোট নোট থাকে না। বড় নোট ভাঙাতে প্রচুর সমস্যা হয়। কেউ ভাঙাতে চায় না।”

গত ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ, বুধবার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বর্ষপূর্তি। দেখতে দেখতে বছর ঘুরলেও খুচরোর আকাল তেমন ভাবে মেটেনি।

Advertisement

মেদিনীপুরের বাসিন্দা পারমিতা খামরইয়ের কথায়, “এটিএমে গেলে বড় নোটই পাই। ফলে, হাতে অনেক সময় একদম খুচরো থাকে না। এ মাসের শুরুতেও একবার এটিএমে গিয়েছিলাম। সেই দু’হাজার টাকার নোটই পেয়েছি।” তাঁর কথায়, “সিপাইবাজারের কাছে এক এটিএমে দেড় হাজার টাকা তুলতে চেয়েছিলাম। তুলতে পারিনি। সেই দু’হাজার টাকার নোটই পেয়েছি।”

ছোট নোটের সমস্যার কথা মানছেন ব্যবসায়ীরাও। মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায়ের কথায়, “মেদিনীপুরে ছোট নোটের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে একশো টাকার নোটের। অনেকে এসে দোকানে দু’হাজার নোট ধরিয়ে দেন। দোকানদারের কাছে ভাঙানি থাকলে তবেই তো দেবে? না থাকলে দেবে কী করে? আসলে সবাই যেন আতান্তরে।” ‘ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’-এর মেদিনীপুর ইউনিটের সম্পাদক চন্দন রায়ের কথায়, “এটিএমগুলোয় বড় নোটই বেশি থাকছে। তারফলেই এই সমস্যা। নোট ভাঙাতে গিয়ে অনেকে সমস্যায় পড়ছেন। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খদ্দেররাও সমস্যায় পড়ছেন।”

শহরবাসীর বক্তব্য, দু’হাজার টাকার নোট নিয়ে বাজারে গেলে খুচরো পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও অনেক সময়ই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে। এটিএমে ছোট নোটের জোগান স্বাভাবিক থাকলে এই সমস্যা হত না।

এক বছর আগে নোট ভোগান্তির জেরে সমস্যায় পড়েছিলেন সঙ্গীতা ঘোষ, রুম্পা মাহাতোরা। সঙ্গীতারা মেদিনীপুরের মেসে থেকে পড়াশোনা করেন। ছোট নোট পেতে আজও কমবেশি সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। সঙ্গীতা বলছিলেন, “মাসের প্রথম দিকে বাড়ি থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ সময় এটিএম থেকে ছোট নোট পাই না। সেই বড় নোট বেরোয়। দু’হাজার টাকার নোট ভাঙানো সত্যিই সমস্যার। নিত্য প্রয়োজনীয় ছোটখাটো জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে দোকানে বড় নোট দিতে নিজেরই কেমন লাগে!” কেন এখনও ছোট নোটের আকাল? পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) শক্তিপদ পড়িয়ার জবাব, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখছি। এখন তো সব নোটেরই জোগান স্বাভাবিক।” জেলার এক ব্যাঙ্ককর্তার কথায়, “আসলে এখন দু’হাজার টাকার নোটের জোগান বেশি। তাই বেশির ভাগ এটিএমে দু’হাজার টাকার নোট থাকে। তবে পাঁচশো, একশো টাকার নোটের জোগানও রয়েছে। এই নোটও এটিএমে থাকার কথা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement