মেদিনীপুর শহরের একটি সোনার দোকানে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।
গত দু’বছর করোনা পর্বে সোনার বাজার সেভাবে জমেনি। এবার অক্ষয় তৃতীয়ার আগে বাজার ধরতে নানা উপহার ঘোষণা করেছেন সোনার দোকানের মালিকরা। কেউ মজুরিতে ছাড়ের ঘোষণা করেছেন। তারপরেও অবশ্য অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনার বাজার এখনও ততটা জমে ওঠেনি। তবে বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও দোকানে ভিড় জমিয়েছেন উৎসাহীরা। তাতেই আশার আলো দেখছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিকে অনেকেই অত্যন্ত শুভ বলে মনে করেন। এই দিনে সোনা কেনার চলও অনেক দিনের। তাছাড়া এখন বিয়ের মরসুমও চলছে। ইদও আছে। ইতিমধ্যে অক্ষয় তৃতীয়া উদযাপন করতে শুরু করেছে অনেক গয়নার দোকান। মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায় বলেন, ‘‘এ বার বাজার বেশ ভালই। দোকানিরা খুশি।’’ নামী সংস্থার দোকানগুলিতে যেমন ভিড় হচ্ছে তেমন তুলনায় ছোট দোকানগুলিতেও ভিড় চোখে পড়ছে। মেদিনীপুরের এক গয়নার দোকানি জানাচ্ছেন, বরাত আসছে। সেই মতো গয়না গড়া হচ্ছে। বাজার এ বার খারাপ নয়।
ঘাটাল শহরের এক সোনার দোকানের কারিগর অমলেন্দু সানকি অবশ্য বললেন, “বিয়ে বাড়ির জন্য অল্প বরাত আসছে। সেই টুকুই যা কাজ। নববর্ষ কিংবা অক্ষয় তৃতীয়ায় বাড়তি বাজার ঘাটালের সব দোকানে নেই।” চন্দ্রকোনাতেও একই ছবি। সেখানে আবার অক্ষয় তৃতীয়াকে সামনে রেখে বিভিন্ন দোকানে বিশেষ ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে দোকান মালিকরা। চন্দ্রকোনা শহরের একটি অভিজাত সোনা দোকানের মালিক আশিস কামিল্যা বলেন, “আমরা সোনার বাজার মূল্যের উপর প্রতি দশ গ্রামে এক হাজার টাকা নগদ ছাড় ঘোষণা করেছি। তাছাড়াও সোনার মজুরির উপর দশ শতাংশ ছাড়া হচ্ছে।” দাসপুর শহরের এক সোনা দোকানের মালিক বিশ্বনাথ পাখিরা জানালেন, সোনার দাম এখন চড়া। তাই অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য বাড়তি খদ্দের এখন নেই। তবে নিত্য নতুন কালেকশন দেখতে ভিড় হচ্ছে। যেটুকু কেনাবেচা হচ্ছে সেটা বিয়ে বাড়ির জন্য। চন্দ্রকোনা রোডের এক গয়নার দোকানের মালিক অনন্ত করের আক্ষেপ, ‘‘এখন অলঙ্কার কেনার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। তাই এবারের অক্ষয় তৃতীয়ার আগের মত ভিড় নেই দোকানে।” গড়বেতার স্বর্ণ কারিগর ও পাইকারি ব্যবসায়ী চন্দন দত্ত অবশ্য জানালেন, এবার গত দু’বছরের থেকে পরিস্থিতি বদলছে। ব্যবসার বিরাট কিছু পরিবর্তন না হলেও অক্ষয় তৃতীয়ার আগে তুলনামূলকভাবে কিছু বিক্রিবাটা হচ্ছে।
খড়্গপুরে সোনার বাজার মূলত ধনতেরাসে জমে উঠে, অক্ষয় তৃতীয়ায় সেভাবে নয়। গোলবাজারের এক সোনার দোকানের মালিক বিক্রম রাও বলেন, ‘‘এ বার নববর্ষ, অক্ষয় তৃতীয়া ও ইদের বাজারে মন্দা। মানুষ নতুন জামাকাপড়ে ঝুঁকেছে। শুধুমাত্র বিয়ের জন্য সামান্য গয়না বিক্রি হচ্ছে। সেটাও আগের তুলনায় কম। গরমে এমনিতে বাজারে লোক নেই। তারপরে সোনার দামও বেশি। কীভাবে ব্যবসা চালাব বুঝতে পারছি না!
ঝাড়গ্রাম শহরেও সোনার দোকানে কেনাকাটার ভিড় তুলনামূলক কম। সেখানকার এক সোনার দোকানের মালিক অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘তীব্র গরমের জন্য এখন কয়েকদিন কেনাবেচা কম রয়েছে। যেটুকু কেনাবেচা হচ্ছে তা বিয়ে বাড়ির জন্য। তবে ঝাড়গ্রামে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন সোনা বিক্রি হয়।” ঝাড়গ্রাম শহরের একটি সোনার দোকানের ম্যানেজার সুস্মিতা মণ্ডলের কথায়, ‘‘গত কয়েকদিনে মানুষজনের কেনাকাটা করার প্রবণতা বেড়েছে। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন কেনাকাটার ভিড় থাকে। এবার দেখা যাক।’’
তথ্য: অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে, রঞ্জন পাল, দেবমাল্য বাগচী এবং রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য