বাজার মন্দা। তবুও শোলা বানানোর তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র।
আগমনী সুর আজ তাঁদের কাছে বড্ড বেসুরো। পুজো মানে বাড়তি রোজগারের আশায় চরম ব্যস্ততা ছবি এখন অতীত। করোনা কালে লকডাউনের জেরে কলকাতার পুজো কমিটিগুলি থেকে এখনও কাজের বরাত আসেনি। বরাত আসেনি প্রতিমার শোলার গয়নার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও। হাতে কাজ না থাকায় তাই মন খারাপ শোলার সাজের অলঙ্কার শিল্পীদের।
দুই মেদিনীপুর থেকে কলকাতার অধিকাংশ সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপগুলিতে শোলার গয়না সরবরাহ হয়। শোলার গয়না তৈরির এই শিল্পীদের মালাকার বলে। এতদিন মালাকার পাড়ায় এই সময় বাড়তি কাজের চাপে দম ফেলার ফুরসত থাকত না। বাড়ি ছোট সদস্য থেকে মহিলা সকলেই দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের অলঙ্কার তৈরীতে লেগে পড়েতন। অনেকে বাড়তি বরাত সামলাতে শ্রমিক নিয়োগ করতেন। কুটির শিল্পের এই কাজ বারো মাস চললেও পুজোর সময় বাড়তি রোজগারের আশায় থাকতেন মালাকাররা। যদিও গত বেশ কয়েক বছর ধরেই কাঁচামালের অভাব এবং থার্মোকলের প্রভাবে এই শিল্প কিছুটা কোণঠাসা। তবে পুজোর সময় বদলে যেতে ছবিটা। অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এক একজন ৫০ থেকে ৬০টি মণ্ডপের ডাকের গয়না তৈরির বরাত পেতেন। এ ছাড়া ছোট প্রতিমার জন্য আলাদা অর্ডার থাকত বলে জানালেন শিল্পীরা।
করোনা পরিস্থিতিতে এখন শহর ও শহরতলির বারোয়ারি পুজো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কম বাজেটে কোনও ভাবে পুজো সারতে চাইছে কমিটিগুলি। সেই ঘাটতির প্রভাব পড়েছে দুই মেদিনীপুরের শোলার গয়না তৈরির শিল্পেও। সামান্য দু’একটি বরাত এলেও অনেকেরই হাতে কাজ নেই। আর্থিক অনটনে দিন কাটাচ্ছেন শিল্পীরা। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, কসবা, গোয়ালদা, রামনগর, এগরা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, দশগ্রাম-সহ একাধিক গ্রামে শোলাশিল্পের হতশ্রী অবস্থা।
যদিও শিল্পীদের আশা, দুর্গাপুজোর পরে লক্ষ্মী ও কালীপুজোয় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সেই ভেবে তাঁরা কাঁচামাল জোগাড় করছেন। পটাশপুরের কসবা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শিল্পী বিমল মালাকার বলেন, ‘‘আগে এই সময়ে প্রচুর কাজের চাপ থাকত। রোজগারও ভাল হত। এ বছর কলকাতার পাইকারি বাজার থেকে এখনও তেমন বরাত আসেনি। আর্থিক অনটনে দিন কাটছে। এখন লক্ষ্মী ও কালীপুজোর জন্য কাঁচা মাল সংগ্রহ করে রাখছি।’’