প্রতীকী ছবি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, অরণ্যশহরে ১৮ বছর ও তার ঊর্ধ্বে একশো শতাংশ বাসিন্দাকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হয়ে গিয়েছে। অথচ এখনও শহরের অনেকেই প্রতিষেধক পাননি বলে অভিযোগ। সত্যিটা জানতে আজ, সোমবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরসভার কর্মীরা সমীক্ষা করবেন। দেখবেন কারা প্রতিষেধক পেয়েছেন আর কারা পাননি। গত শুক্রবার নতুন পুরবোর্ডের প্রথম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঝাড়গ্রাম শহরের টিকাকরণ শিবিরগুলিতে প্রতিদিনই উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে। জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রোজই প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। তবে পুরসভার তরফে পুর-প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের শিবিরে টিকাকরণ হয়। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে পুরসভার উদ্যোগে ওয়ার্ড ভিত্তিক শিবির হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম পুর এলাকায় ৬০,৫৯৯ জনকে প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন ২৭,৮০৬ জন। শহরের জনসংখ্যা ৭০ হাজারের কাছাকাছি। অর্থাৎ এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী সকলেরই প্রতিষেধক পাওয়ার কথা।
অথচ সম্প্রতি পুরসভার নজরে এসেছে, এখনও কয়েকটি ওয়ার্ডে বাসিন্দাদের একাংশ প্রতিষেধক পাননি অথবা নেননি। তাহলে শহরে একশো শতাংশের বেশি টিকাকরণ হল কী ভাবে?
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের মতে, শহরের শিবিরগুলিতে গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি, পড়শি জেলা, এমনকি পড়শি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের লোকজনও এসে প্রতিষেধক নিয়ে গিয়েছেন। সম্প্রতি চেয়ারপার্সন কবিতা ঘোষের নেতৃত্বে ঝাড়গ্রামে নতুন পুর-প্রশাসনিক বোর্ড দায়িত্বে এসেছে। তার আগে থেকেই ওয়ার্ড-ভিত্তিক কুপন বিলি হয়েছিল। সেই কুপন দেখিয়ে অনেকেই প্রতিষেধক পান। কিন্তু কোন ওয়ার্ডের কতজনকে কুপন দেওয়া হয়েছিল, সেই তথ্য পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই। কুপন ঘিরে এমন অস্বচ্ছতার দায় নিতে রাজি নয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলছেন, ‘‘আমাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরে একশো শতাংশ প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। পুর-সমীক্ষায় যদি আরও কিছু বাসিন্দার নাম উঠে আসে তাহলে আমরা তাঁদেরও প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’’ তবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, শহরে প্রতিষেধক দান শিবির গুলি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে পুরসভা। স্বাস্থ্য দফতর কেবল প্রতিষেধক ও প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মীর বন্দোবস্ত করে। ফলে কুপন নিয়ে কোনও অনিয়ম হয়ে থাকলে তার দায় স্বাস্থ্য দফতরের নয়।
বিগত পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের সদস্য কল্লোল তপাদার এখন পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন। তিনি বলছেন, ‘‘শহরবাসীর জন্য ওই কুপন বিলি হয়েছে। হয়তো বাইরের দু’চারজন পেয়ে থাকতে পারেন।’’ জানা গিয়েছে, শহরে প্রতিটি শিবিরে অনলাইনে অগ্রিম বুকিং করে যাঁরা আসছেন, তাঁদের পাশাপাশি, কুপন নিয়ে আসা লোকজনকেও প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। তাই নিয়ে রোজই শিবিরগুলিতে লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের মধ্যে অশান্তি হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসতেই গত শুক্রবার পুর প্রশাসনিক বোর্ডের প্রথম সভা ডাকেন চেয়ারপার্সন কবিতা। সিদ্ধান্ত হয়, ১৮টি ওয়ার্ড ধরে পুর-কর্মীরা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক কতজন প্রতিষেধক পেয়েছেন এবং কারা এখনও পাননি সেই সমীক্ষা করবেন।
কবিতা বলেন, ‘‘এখনও শহরের বেশ কিছু বাসিন্দা প্রতিষেধক পাননি বলে অভিযোগ পেয়েছি। সেই কারণেই বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা করে তালিকা তৈরি করার কাজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, যাঁরা এখনও প্রতিষেধক পাননি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁদের টিকাকরণে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।