ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইলে হাতির দল। ফাইল চিত্র
হাতির হানায় মৃত্যুর তালিকা হল আরও দীর্ঘতর!
শুক্রবার বেলপাহাড়ি ব্লকের ভুলাভেদা রেঞ্জের জঙ্গলে মহুল ফুল কুড়োতে গিয়ে হাতির হানায় বেঘোরে প্রাণ হারালেন এক মহিলা-সহ তিন জন। এই নিয়ে এক সপ্তাহে ঝাড়গ্রাম জেলায় সাতজনের মৃত্যু হল। এ দিনের মৃতরা হলেন দলদলি গ্রামের গুরুচরণ মাহাতো (৬৫), ফুলগেড়্যা গ্রামের সরোজ মাহাতো (৬২) ও ভুলাভেদা গ্রামের কুমোরপাড়ার সুবলা পাল (৫৫)। খবর পেয়ে পুলিশ দেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। পর পর তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ ছড়ায় বেলপাহাড়ির ভুলাভেদা বনাঞ্চল এলাকায়। ভুলাভেদা রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। বন দফতর ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সময় মহুল গাছ থেকে ফুল ঝরে পড়ে। সেই ফুল সংগ্রহ করেন আদিবাসী-মূলবাসীরা। আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহুল গাছের ফুল জনজাতিরা সামাজিক ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তবে মহুল ফুল থেকে তৈরি পানীয় (মহুয়া) বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করা যায় না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চৈত্র মাসে মহুল ফুল কুড়োতে জঙ্গলে যান স্থানীয়রা। এটি কয়েক শতাব্দীর প্রথা!
শুক্রবার সাত-সকালে দলদলির জঙ্গলে গিয়েছিলেন গুরুচরণ, সরোজ-সহ আরও কয়েকজন। হাতিটি চলে আসায় বাকিরা ছুটে পালালেও গুরুচরণ ও সরোজ পালাতে পারেননি। খবর পেয়ে পুলিশ ও বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন দলদলির জঙ্গলে ৭০০ মিটার তফাতে দুই বৃদ্ধের দেহ পড়ে রয়েছে। পরে খবর পাওয়া যায় টংভেদার জঙ্গলে আক্রান্ত হয়েছেন এক মহিলা। বিকেল উদ্ধার হয় সুবলার দেহ। সুবলার ছেলে হেমন্ত পাল বলেন, ‘‘এ দিন সকাল সাড়ে সাতটায় মা টংভেদা জঙ্গলে গিয়েছিলেন। পর পর দু’জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। পরে দেখা যায় জঙ্গল রাস্তার ধারে মায়ের থেঁতলানো দেহ। মনে হয় হাতিটি মাকে তাড়িয়ে নিয়ে এসেছিল।’’
হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনার পর স্থানীয়রা ভুলাভেদা রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। সুবলার দেহ সমেত পুলিশের গাড়িও আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। ওই গাড়ির পিছনেই আর একটি গাড়িতে ছিলেন বেলপাহাড়ি থানার আইসি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। তাঁর গাড়িও আটকানো হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা এই পরিস্থিতি চলার পর ঘটনাস্থলে আসেন ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের এডিএফও বলরাম পাঁজা ও এসডিপিও (বেলপাহাড়ি) উত্তম গরাঁই। মৃতের পরিবারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও এলাকা থেকে হাতিটিকে সরানোর আশ্বাস পেয়ে ঘেরাও বিক্ষোভ ওঠে। এরপরই পুলিশকর্মী ও বন কর্মীরা পৃথক ভাবে ভুলাভেদা ও বাঁশপাহাড়ি এলাকায় গাড়িতে মাইক বেঁধে প্রচার শুরু করেন।
অভিযোগ, আরামবাগের খুনে দাঁতাল হাতিটিকে ধরে ভুলাভেদা রেঞ্জের জঙ্গলে ছাড়ার ফলে সেটি মানুষ মারতে শুরু করেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বন দফতর জানাচ্ছে, শুক্রবার যে হাতিটির কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, সেই হাতিটির দাঁত নেই। ঝাড়গ্রামের ডিএফও শেখ ফরিদ বলেন, ‘‘তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সচেতনতা প্রচার সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে হাতিটি এসেছে। হাতিটিকে সরানোর জন্য হুলাপার্টি ও বনকর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। ডিএফও জানান, এ দিন রাতের মধ্যে মৃতের পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।