চাকরিহারাদের বিক্ষোভ। —ফাইল ছবি।
চার-পাঁচ বছর স্কুলে শিক্ষকতা করে জীবনটাকে নিজেদের মতো গড়ে নিচ্ছিলেন তাঁরা। আচমকা বজ্রাঘাত। সোমবার হাই কোর্টের নির্দেশে ২৫৭৫৩ জন রাতারাতি চাকরি হারানোর পর দিগ্ভ্রান্ত তাঁদের পরিবার। আর্থ-সামাজিক ধাক্কার পাশাপাশি রয়েছে প্রবল মানসিক চাপ। কাঁধে এসে পড়েছে ধূসর হয়ে যাওয়া ভবিষ্যৎ সম্বল করে আবার একেবারে শূন্য থেকে শুরু করার গুরুভার।
পাঁচ বছর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক থাকার পরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৯ সালের ১ মার্চ হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ময়নার সন্দীপ মান্না। চাকরিহারা হয়েছেন সন্দীপ। বাঁকুড়ার দীপা দানা বাড়ির কাছে একটি হাইস্কুলে ১১ বছর পার্শ্ব শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। এসএসসি পাশ করে ২০২১ সালে তমলুকের চাঠরা কুঞ্জরানি বাণী ভবন হাইস্কুলে ইংরাজি শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। চাকরি গিয়েছে দীপারও। এমন আরও অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা তাঁদের পরিজন নিয়ে আপাতত দিশেহারা। সামাজিক ভাবে সহানুভূতির বদলে কটাক্ষ, সমালোচনার পাত্র হচ্ছেন তাঁরা। কারণ, প্রায় সকলেই মনে করছেন, ঘুরপথে চাকরি পেয়েছেন তাঁরা। হাই কোর্ট রায় পুনর্বিবেচনা করে তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিক—আপাতত এটাই আর্জি তাঁদের।
ময়নার নারিকেলদাহা গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ মান্না। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর চক্রের বেলডবা প্রাথমিক স্কুলের সহ-শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে এসএসসি’তে মেধা তালিকার ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ১ মার্চ মুর্শিদাবাদের সরলপুর হাইস্কুলে যোগ দেন। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর সেখান থেকে বদলি হন ময়নার দক্ষিণ চংরাচক সুকান্ত বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে। সন্দীপের কথায়, ‘‘প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি ছেড়ে হাইস্কুলে শিক্ষক হই। দু’টোই গেল। বাড়িতে বাবা-মা, স্ত্রী ও দেড় বছরের মেয়ে রয়েছে। এখন কী করব জানি না।’’
কার্তিক আদক ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক। ২০১৬ সালের প্যানেলে ২০১৯ সালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কেসিলি এমদাদিয়া হাই স্কুলে নবম-দশম শ্রেণির ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তারপর ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে পারস্পরিক বদলির মাধ্যমে হলদিয়ার চকদিপা হাইস্কুলে আসেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে মোট ১৯ বছর ৫ মাস শিক্ষকতা করার পর হাই কোর্টের রায়ে তাঁর চাকরি গিয়েছে। প্রায় মধ্যবয়সে এই পরিস্থিতিতে পড়ে কূলকিনারা পাচ্ছেন না কার্তিক। বাঁকুড়ার দীপা বলছেন, ‘‘পরিবার নিয়ে অথৈ জলে পড়লাম। আদালত রায় দেওয়ার আগে আমাদের মতো যোগ্য প্রার্থীদের বিষয়টি বিবেচনা করলে ভাল হত।’’
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরিপ্রার্থী হিসেবে যুক্ত মাহিউদ্দিন আহমেদ ওরফে মাহি। ‘পশ্চিমবঙ্গ চাকরি প্রার্থী মঞ্চ’র সভাপতি মাহিউদ্দিন এ বারে লোকসভার নির্বাচনে আইএসএফ প্রার্থী তমলুক কেন্দ্রের। তিনি আদালতের এই রায় ঠিক বলে মনে করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ১২ হাজার চাকরিপ্রার্থী অপেক্ষমান। আদালতের নির্দেশে পুনর্মূল্যায়ণের সুযোগ রয়েছে। তাই যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার কথা নয়। আমরা চাই, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করুক।’’