পার্থের সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু (পাশে)। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি-তে (ডিসপ্লে পিকচার) দীর্ঘ সময় ধরে ছিল রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। হঠাৎই ডিপি থেকে সেই ছবি উধাও হয়েছে! মন্ত্রী পার্থকে ইডি-র টানা জিজ্ঞাসাবাদ, পরে গ্রেফতার। এই আবহে ওই ডিপি-র ছবি পরিবর্তন নিয়ে নানা মহলে শোরগোল পড়েছে যথেষ্টই। জেলার রাজনৈতিক মহল, এমনকি জেলার শিক্ষা মহলেও। প্রশ্ন উঠছে, ‘কঠিন সময়ে’র মধ্যে দিয়ে যাওয়ার প্রতিফলনই কি পড়ল তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে!
তিনি কৃষ্ণেন্দু বিষই। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নাম মন্ত্রী পার্থের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই নানা মহলে ঘোরাফেরা করে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানও ছিলেন কৃষ্ণেন্দু। গত মাসে সেখান থেকে অপসারিত হয়েছেন। এই সময়ে ওই ডিপি থেকে পার্থর ছবি সরানো কি তাঁর সচেতন সিদ্ধান্তই, জল্পনা। কৃষ্ণেন্দুর অবশ্য দাবি, ডিপি-র ছবি তিনি আগেই পরিবর্তন করেছেন। তাছাড়া এই প্রথম নয়, মাঝেমধ্যেই তিনি ডিপি-র ছবি পরিবর্তন করেন। ফলে, এ নিয়ে বিতর্ক অহেতুক! ওই ছবি আগেই সরানো হয়ে থাক বা সদ্য, নানা মহলে জল্পনা অবশ্য চলছেই। এখন তাঁর ডিপি-তে রয়েছে কেকের ছবি। কেকের উপরে লেখা রয়েছে তাঁর মেয়ের নাম।
গত কয়েক বছরে জেলায় পার্থ যখনই এসেছেন, তাঁর পাশে দেখা গিয়েছে এই কৃষ্ণেন্দুকে। একাধিক সামাজিক অনুষ্ঠানে ওই মন্ত্রীর বাড়িতেও না কি গিয়েছেন তিনি। পার্থর সঙ্গে তাঁর পরিচিতির কথা মানছেন কৃষ্ণেন্দুও। তাঁর কথায়, ‘‘উনি (পার্থ) দলের মহাসচিব। আমাদের শিক্ষক সমিতির কাজকর্মও দেখভাল করতেন। আমি সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সমিতির অন্য নেতাদের সঙ্গে ওঁর যেমন সম্পর্ক ছিল, আমারও তেমন সম্পর্ক ছিল। এতে অন্যায়ের কী আছে!’’
প্রায় ৯ মাস জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন কৃষ্ণেন্দু। গত ২৬ জুন, রবিবার সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। পোস্টে তাঁর ঘোষণা ছিল, ‘চেয়ারম্যান ডিপিএসসি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। এবং রেজিগনেশন দিলাম’। পরে শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছিল, সংসদের চেয়ারম্যান পদ থেকে কৃষ্ণেন্দুকে অপসারণই করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা জারি হয় ২৪ জুন, শুক্রবারই। সংসদ ছাড়ার দিনে অবশ্য তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘সরে গেলাম কিংবা সরিয়ে দেওয়া হল, যা হোক একটা বলতে পারেন! কারণটা ব্যক্তিগতই। আমার মনে কোনও ক্ষোভ নেই। এরমধ্যে অন্য কিছু খুঁজবেন না প্লিজ।’’ জল্পনা ছিল, পার্থ-পরশে না কি সংসদ চেয়ারম্যান হয়েছিলেন এই শিক্ষক নেতা। কৃষ্ণেন্দুকে সেদিন এ-ও বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি স্বপ্নেও কখনও কল্পনা করিনি যে, আমি ডিপিএসসি চেয়ারম্যান হব বলে। মুখ্যমন্ত্রী আমার মতো একজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি ধন্য। আমি ধন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে, কারণ আমি যোগ্যতার থেকে বেশি পেয়েছিলাম। সরকার মনোনীত করেছিল। সরকারই অব্যাহতি দিয়েছে।’’
ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ। তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই এখন ‘অস্বস্তি’তে জেলার এই শিক্ষক নেতা। ইতিউতি থেকে দু’- চার কথা শোনাও যাচ্ছে। এই আবহে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি- র ছবি পরিবর্তন অনেকের নজর কেড়েছে! যদিও কৃষ্ণেন্দু বলছেন, ‘‘আমি সাধারণ একজন শিক্ষক। খুব সাধারণ জীবনযাপন করি। বাইরে কে কী বলছেন, না বলছেন, আমার কোনও রকম কোনও প্রতিক্রিয়া নেই সে নিয়ে।’’
হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি-তে পরিবর্তন এসেছে। তাঁর ফেসবুকের প্রোফাইল কভারে অবশ্য এখনও পার্থর ছবি রয়েছে। সেখানে পার্থর পাশে তিনি ছাড়াও রয়েছেন আরও কয়েকজন।