মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরের আগেই বিভিন্ন জনজাতি ও কুড়মি সংগঠনের প্রতিনিধিদের আলোচনায় ডাকল নবান্ন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আজ, বৃহস্পতিবার সাঁওতাল, ভূমিজ, মুন্ডা, লোধা-সহ বিভিন্ন জনজাতি সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক কুড়মি সামাজিকসংগঠনের নেতাদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
তবে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলাদা ভাবে না একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে বৈঠক হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রতিটি সংগঠন থেকে অনধিক দু’জনকে আজ, নবান্নে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মুল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলছেন, ‘‘নবান্নের চিঠি পাইনি। কেবল পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বৃহস্পতিবার নবান্নে যেতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নাকি বৈঠক করবেন। কী বিষয়ে আলোচনা হবে জানা নেই।’’ অজিত জানাচ্ছেন, তিনি নিজে হয়তো যেতে পারবেন না। তবে সংগঠনের দু’জন প্রতিনিধিকে পাঠাবেন। কুড়মিদের ‘দৌওদিয়াকে খৌওসিয়া’ কমিটির মুখপাত্র তথা কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) সভাপতি রাজেশ মাহাতোও বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নবান্নে যেতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছেন। তাই যাব।’’
ফেব্রুয়ারির শেষে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক জনসভা করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তার আগে নবান্নের এই বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। জঙ্গলমহলের জনজাতিরা নানা দাবিতে সরব। কুড়মিরাও জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কুড়মিদের ওই দাবির বিরোধিতা করছে জনজাতি সংগঠনগুলি। এমন আবহে লোকসভা ভোটের আগে জনজাতি-কুড়মি ভারসাম্যের চেষ্টা হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। ঝাড়গ্রাম জেলাতৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলের প্রতিটি মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী সবার কথা শুনতে চান।’’ যদিও জেলাবিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর দাবি, ‘‘প্রতিবার ভোটের সময় মমতার সরকার জনজাতি ও মূলবাসীদের নানা প্রলোভনদেখায়। এবারও প্রশাসনিকবৈঠকের আড়ালে ভোট আদায়ের চেষ্টা হচ্ছে।’’
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জঙ্গমহলের চার জেলার পাঁচটি আসনে পদ্ম ফুটেছিল। তারপর বিধানসভা, পুরসভা ও পঞ্চায়েতে অবশ্য তৃণমূলের জয়যাত্রা অব্যাহত থেকেছে। তাও জঙ্গলমহল নিয়ে শাসকদলের অন্দরে চাপা উদ্বেগ রয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচি কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছিল। তাঁর কনভয়ের পিছনে থাকা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলার অভিযোগে ১৫ জন কুড়মি নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। পরে অবশ্য সকলেই জামিন পেয়েছেন। তবে ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের ‘মহামোড়ল’ অনুপ মাহাতোর নাম চার্জশিট থেকে বাদ যায়। অনুপও এখন পৃথক কর্মসূচি করছেন। কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অনুপের সংগঠন কলকাতায় জমায়েত করেছে। তিনিও বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে আমিও ডাক পেয়েছি।’’
সাঁওতাল সামাজিক সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের দু’টি গোষ্ঠীকেই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। বাদল কিস্কু গোষ্ঠীর ঝাড়গ্রাম জিলা পারগানা ঢাঙ্গা হাঁসদা বলছেন, ‘‘আমি যাব।’’ পারগানা মহলের রবিন টুডু গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় মুর্মুও বৈঠকে যোগ দেবেন বলে সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, সামাজিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকের আগে কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ, পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদের মত বিভিন্ন সরকারি পর্যদ ও কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এদিনমুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করবেন। ২০১৭ সালে কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ তৈরির পরে এই প্রথম তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর জুনেপশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদ গঠিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তার চেয়ারপার্সন। এই পর্ষদেরও প্রথম সভা আজই। পর্ষদের সদস্য ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির নেতা অসিত খাটুয়া বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উন্নয়নের পাশে আমরা আছি। আমাদের কাছে প্রথম বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’