mamata banerjee

বাজেটে দিদির ঘোষণা, সেতুতে জুড়বে হলদির দুই পাড়

মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলদি নদীর উপরে নন্দীগ্রাম এবং হলদিয়াকে জুড়ে দেওয়ার জন্য সেতু তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন।

Advertisement

সৌমেন মণ্ডল

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১০
Share:

সেতু হলে হলদির এই দুই পাড়ই জুড়ে যাবে। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্য বাজেটে মেজো বোন নন্দীগ্রামকে সেতু উপহার দিলেন দিদি!

Advertisement

শুক্রবার ছিল রাজ্য সরকারের বাজেট পেশ। তাতে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলদি নদীর উপরে নন্দীগ্রাম এবং হলদিয়াকে জুড়ে দেওয়ার জন্য সেতু তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন। তাতে শিল্পশহর এবং নন্দীগ্রামবাসী খুশি হলেও ওই ঘোষণা ভোটের আগে কেবল চমক বলে দাবি করছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নন্দীগ্রামের তেখালিতে গিয়ে সভা করেছিলেন মমতা। সেই সভায় তিনি আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তেলাখিতেই মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ভবানীপুর যদি তাঁর বড় বোন হয়, তবে নন্দীগ্রাম মেজ বোন। পাশাপাশি, হলদি নদীর ওপর হলদিয়া-নন্দীগ্রাম সংযোগকারী সেতু তৈরির কথা যে তিনি চিন্তা করছেন, সভামঞ্চ থেকে তা-ও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

সেই কথা মতো এ দিন বিধানসভা ভবনে মমতা সেতু তৈরির কথা ঘোষণা করায় খুশি হলদির দুই তীরের বাসিন্দারা। হলদির একদিকে নন্দীগ্রাম, অন্য দিকে হলদিয়া। দুই তীরের মানুষের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ। কর্মসূত্রে হোক বা অন্য প্রয়োজনে দুই পাড়ের বাসিন্দা নিয়মিত দু’দিকেই যাতায়াত করেন। কিন্তু দুই পাড়ের যোগাযোগের ভরসা ফেরি পরিষেবা। ফেরিতে অনেক সময় যাত্রী সুরক্ষা মানা হয় না। আর জলপথ না হলে নন্দকুমার দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। তাতে সময় লাগে বেশি। সেতু তৈরি হলে সময় এবং খরচ বাঁচবে বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা।

হলদিয়ায় আনাজ বিক্রি করেন নন্দীগ্রামের বাসিন্দা রাজু মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন আনাজ নিয়ে নৌকা ভাড়া করে যেতে হয় হলদিয়ায়। তাতে নৌকা ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। যতক্ষণ না সবার আনাজ বিক্রি হয়, ততক্ষণ নৌকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেতু হলে সাইকেলে করেই আনাজ নিয়ে হলদিয়া গিয়ে বেচতে পারব। নৌকা ভাড়ার টাকাটা বাঁচবে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণার ফলে আমাদের মত আনাজ ব্যবসায়ীদের খুব উপকার হবে।’’ আবার, নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কর্মরত হলদিয়ার বাসিন্দা সামিনা আখতার বানু। তাঁর কথায়, ‘‘নদী পেরিয়ে যেতে প্রতিদিন ৭০ টাকা ভাড়া লাগে। ফেরি পরিষেবা বন্ধ হলে ঘুরপথে বহু কিলোমিটার পেরিয়ে কাজের জায়গায় পৌঁছতে হয়। সেতু হলে অনেক সুবিধা হবে। ’’

উল্লেখ্য, বাম জমানায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের সম্প্রসারণ এবং নন্দীগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য হলদি নদীতে একটি সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সে সময় হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান লক্ষ্ণণ শেঠ এতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ২০০৫ সালের ওই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অবশ্য হয়নি। এবারও মমতার ওই ঘোষণার রূপাহণ হবে না বলে দাবি করছে বিরোধী দল বিজেপি। বিজেপির তমলুক জেলা সাংগঠনিক সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলছেন, ‘‘ভোটের সময় উন্নয়নের কথা মনে পড়ল! এর আগে উনি কর্মতীর্থ, কিসান মান্ডি যা করেছেন, তাতে মানুষের কোনও সুবিধা হয়নি। উনি ঘোষণা করে দেন ঠিকই। কিন্তু কাজটা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার থাকে না। অহেতুক পয়সা নষ্ট হয়।’’ এর পরেই প্রলয়ের কটাক্ষ, ‘‘নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পরিকাঠামোর অভাবে মাতৃসদনে পরিণত হয়েছে। ভোটের মুখে একগুচ্ছ ঘোষণা করে মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর বেশি কিছু নয়।’’

যদিও তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি স্বদেশরঞ্জন দাস বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণায় নন্দীগ্রামের মানুষ খুব খুশি হয়েছে। নন্দীগ্রাম- হলদিয়া সেতু তৈরি হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। আর মুখ্যমন্ত্রী যা প্রতিশ্রুতি দেন, তা বাস্তবে রাখেন। এই ঘোষণা তার প্রমাণ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement