মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র
একদিকে অতিমারি করোনা। অন্যদিকে আমপান। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলের ক্ষয়ক্ষতিকে রাজ্য সরকার যে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে, তা পরপর দুদিন প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেন, ‘‘তাজপুরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সমুদ্র বন্দর হবে। দিঘাতে কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি হবে। দুটি প্রকল্পে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে।’’ শুধু নতুন ঘোষণা নয়, এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সংখ্যালঘু স্কলারশিপ সহ সমস্ত প্রকল্পে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার কর্মসূচির সূচনা করেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ এদিন ১,৮৮৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর ৩৩২ কোটি টাকা পেয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবারও ভিডিয়ো বৈঠকে রাজ্যের একাধিক জেলার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় করোনা পরিস্থিতিতে উন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ভরা কটালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাজপুর সমুদ্র বাঁধের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংসদ শিশির অধিকারীর কাছে খোঁজখবর নেন। শঙ্করপুর থেকে জলধা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্র বাঁধ মেরামতের কাজ সঠিকভাবে চলছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন শিশির। বুধবার পর্যালোচনা বৈঠক শুরুর আগে সেচ আধিকারিক এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধ মেরামতির সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর নতুন দুটি প্রকল্পের ঘোষণায় জেলা সভাধিপতি দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জেলার অর্থনীতি বদলে যাবে।’’ এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর কনফারেন্স শিশির অধিকারীর সঙ্গে জেল সভাধিপতি, জেলাশাসক পার্থ ঘোষ-সহ উচ্চপদস্থ আমলা এবং পুলিশ আধিকারিকরা ছিলেন।
তবে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক হলেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাংসদ শিশির অধিকারীর এই ভিডিয়ো বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্য তথা জেলা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে এই মুহূর্তে তৃণমূলে চর্চা কম নয়। রাজ্য রাজনীতিতে তাঁকে ‘কোণঠাসা’ করার অভিযোগের মধ্যেই প্রশান্ত কিশোরের ‘ইয়ুথ ইন পলিটিক্স’ কর্মসূচিতে শিশির যোগ দিয়েছিলেন। তারপরই শিশিরের সঙ্গে জেলার উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা ও নয়া প্রকল্প ঘোষণা।
মঙ্গলবার ভিডিয়ো বৈঠকের ফাঁকে শিশিরের অসুস্থ স্ত্রীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। দলনেত্রীর এমন পদক্ষেপ জেলায় অধিকারী পরিবারের অবস্থান এবং তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের বিন্যাসে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।