—প্রতীকী চিত্র।
ভরা গরমে সপ্তাহান্তে ঘূর্ণিঝড়ের অশনি সঙ্কেত। তা যেমন ভাবাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলের বাসিন্দাদের, তেমনই চিন্তায় রয়েছে জেলা প্রশাসনও। কারণ, শনিবার লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফার ভোটগ্রহণ।
তিন বছর আগে এক মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’ লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল দিঘা, কাঁথি, মন্দারমণি, তাজপুর-সহ একের পর এক এলাকা। এবার চোখ রাঙাচ্ছে ঝড় ‘রেমাল’। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হবে এবং ২৬ মে সকালে তা পরিণত হবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান মন্ত্রকের ডি ডি জি এম পূর্বাঞ্চল সোমনাথ দত্ত বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে গভীর নিম্নচাপ রয়েছে। ২৫ মে অতি গভীর নিম্নচাপ এবং ২৬ তারিখ সকালে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে এটি পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উপকূল এলাকায় রবিবার মধ্যরাতে ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে আছড়ে পড়তে চলেছে।’’ ঝড়ের জেরে শুক্রবার ভোর থেকে উত্তাল হবে সমুদ্র। এই কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদের স্থলভাগে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় রেমালে’র প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে। ২৫ মে পূর্ব মেদিনীপুরে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার, ২৬ মে ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার এবং ২৭ মে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। জেলায় অতিরিক্ত বজ্রপাতের সতর্কতাও জারি হয়েছে।
সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কাঁথি মহকুমার সমুদ্র তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা। কাঁথি-১ ব্লকের শৌলার বাসিন্দা দেবব্রত গিরি বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগে ইয়াসের জলে সব নষ্ট হয়েছিল। আবার একই ঘটনা হলে ফের বাড়ি ছাড়তে হবে।’’ এই শৌলাতেই রয়েছে মৎস্যবন্দর। আগের দুর্যোগে মত্স্য বন্দরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তবে তিন বছর ধরে একটু একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছে গ্রাম। ফের কি বন্দর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে, এখন সেই প্রশ্ন মৎস্যজীবীদের মনে। যদিও দুর্যোগ মোকাবিলায় সবরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার জেলার ২৫ জন বিডিও-কে নিয়ে জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়।
কাঁথির মহকুমাশাসক শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সব দফতরের মহড়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।’’ জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলছেন, ‘‘আয়লা কেন্দ্রগুলি খোলা রাখা হচ্ছে। জেলা স্তরে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। শুক্রবার থেকে রাজ্যস্তরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।’’
এদিকে, শনিবারই জেলায় ভোটগ্রহণ। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে উপকূলবর্তী এলাকায় ১০৮৯টি বুথ রয়েছে। সেই সব বুথের প্রসঙ্গে কাঁথির উপ মহকুমাশাসক শামসুজ্জামান বলছেন, ‘‘সবকটি বুথ পাকা বাড়িতে রয়েছে। তাই অসুবিধে হবে না বলে অনুমান। তবে ঝড়ের কথা মাথায় রেখে বিডিওদেরকে বুথে বুথে বিকল্প জেনারেটর, পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া, এক মাস আগে থেকে প্রতিটি বুথে প্রয়োজনীয় পরিষেবা খতিয়ে দেখা হয়েছে।’’