তমলুকে জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: কৌশির সাঁতরা
জমি নিয়ে আন্দোলনের সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। এখনও নিখোঁজ কেউ কেউ। এক দশক আগে নন্দীগ্রামের ওই ঘটনা একাধিক নির্বাচনে ‘সাফল্য’ এনে দিয়েছে তৃণমূলকে। বতর্মান প্রজন্মের নতুন ভোটারদের অধিকাংশের কাছেই সে দিনের ঘটনার স্মৃতি ধূসর। লোকসভার ভোটের আগে এখনকার ছেলে-মেয়েদের কাছে সেদিনের সেই আন্দোলনের কথা, মৃত্যুর কথা তুলে ধরতে রবিবার হেঁড়িয়ার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের টেনে আনলেন নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ। যা শুনে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, নন্দীগ্রাম বার বারই এই জেলায় ভোটের ময়দানে মুখ্যমন্ত্রীকে বোনাস দিয়েছে। তাই প্রতি ভোটের মতো এ বারও তিনি প্রচারে নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ টেনেছেন।
এ দিন নন্দীগ্রাম থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে হেঁড়িয়ায় সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সভায় বক্তৃতায় ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে নানা ঘটনার স্মৃতি উসকে দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘মনে আছে সূর্যোদয়! গায়ে কাঁটা দিত, আমি ভুলিনি বন্ধু। আমি ভুলব না।’’ তারপরেই বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘এখনকার ছেলে-মেয়েরা জেনে রাখুন। কালীপুজোর দিন আমি বাড়িতে যেতে পারিনি। তৃণমূল ভবনে বসে রয়েছি। একবার সুপিয়ানকে ফোন করি। একবার আবু তাহেরকে ফোন করছি। ওরা আমায় ফোনে শোনাচ্ছে গুলি চলছে। বোমা ফাটছে। আমি ওদের বললাম, তোরা সাবধানে থাকিস। জীবনটা অন্তত বাঁচা!’’
সেদিনের স্মৃতিচারণ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজও অনেকে বাড়ি ফেরেননি। ওঁদের বাঁশে দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে হলদি নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে বলে শুনেছি। ১৬ জন মানুষের আজ পর্যন্ত কোন খোঁজ নেই। ১৪ মার্চের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘১৪ জনকে গুলি করে মারা হয়েছিল। তারপর আরও দুজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
হাতে-হাত: সভায় মমতার সঙ্গে কাঁথির প্রার্থী শিশির অধিকারী (বাঁদিকে) ও তমলুকের প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী।
এদিন প্রচারে এসে মিনিট পঁয়তাল্লিশের ভাষণের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল নন্দীগ্রাম সহ জেলা জুড়ে বিরোধীদের উপর সিপিএমের অত্যাচারের প্রসঙ্গ। কিন্তু এত বছর পরে ফের কেন নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ টানলেন তৃণমূল নেত্রী! বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম প্রেম ওদের মুখে মানায় না। নন্দীগ্রাম কিছু পায়নি। এটা মানুষ বুঝতে পেরে গিয়েছে। তাই চাপে পড়ে নন্দীগ্রাম স্মৃতি উসকে আরেকবার ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু তা হবে না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘ওই একটিই রসদ ওদের কাছে রয়েছে। ভোট এলেই ঝুলি থেকে বের করতে হয়। তবে নন্দীগ্রামের মানুষ এই মিথ্যে বুঝে গিয়েছে। এদিন যারা ওই সভায় গিয়েছিল, তারা সবাই তৃণমূলকে ভোট দেবে না।’’
তথ্য: কেশব মান্না ও শান্তনু বেরা