গ্রামে মেলার ফ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের ঢোকার মুখেই একটা দোকানঘর। দাওয়ায় টাঙানো আছে ফ্লেক্সটা। তাতে লেখা, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণায় পটচিত্র মেলা-২০২২’। ফ্লেক্সে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবিও। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়ায় পটের মেলার আয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণা’র ছোঁয়ায় বিস্মিত অনেকে। তাঁদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, এই পটের গ্রামে ২০০৯ সাল থেকে মেলার আয়োজন করেছে ‘বাংলা নাটক ডট কম’ নামে সংস্থাটি।
নয়ায় পটের মেলার সলতে পাকানো শুরু ২০০৪ সাল থেকে। এই বছর থেকেই ‘বাংলা নাটক ডট কম’ পটুয়াদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। ২০০৯ সালে তারা পটের মেলা, ‘পটমায়া’র আয়োজন করে। পরিকল্পনায় এবং অভিনবত্বে পিংলার পরিধি ছাড়িয়ে একসময় মেলা আন্তর্জাতিক চেহারা নেয়। গত দু’বছর মেলা হয়নি অতিমারির প্রভাবে। আগে মেলা হত তিনদিনের। এবার মেলা হবে ২৩-৩১ ডিসেম্বর।
দু’বছর পরে মেলার প্রস্তুতিতে পটুয়াদের ঘরে ঘরে চলছে পট ও অন্য সামগ্রীতে ছবি আঁকা। দাওয়ায় বসে পট আঁকছিলেন মনু চিত্রকর। জানালেন, করোনার দু’বছর খুব খারাপ গিয়েছে। এখন অবস্থা ভাল। সামনের মেলায় বিক্রিবাটা ভাল হবে। সরকারের আয়োজনে মেলা প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘পটুয়াদের জীবনযাত্রা উন্নয়নে বাংলা নাটক ডট কম-এর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। ভাল খবর যে এবার মেলার দিন বেড়েছে। তাতে বিক্রিও বাড়বে।’’ নামী শিল্পী আনোয়ার চিত্রকর বললেন, ‘‘ভালই তো। এতে পটুয়াদের সংগঠন চিত্রতরু স্বাবলম্বী হবে।’’ বাহাদুর চিত্রকর বা চিত্রতরুর সম্পাদক মন্টু চিত্রকরের মত একই। মন্টু বললেন, ‘‘এবার সরকারের উদ্যোগে মেলা। এতে আরও ভাল হবে। মেলার দিন বাড়াতে লোকসমাগম বেশি হবে। বিক্রিও বাড়বে।’’
এলাকার বিধায়ক তথা জলসম্পদ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াই মূলত সরকারের পরিচালনায় মেলা আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘চিরকাল এই মেলা রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যেই হয়ে এসেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি সরকার আর পটুয়াদের মাঝখানে থাকত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই মেলা।’’ মন্ত্রী জানিয়েছেন, নয়ায় পর্যটন ও পটের হাব করার কথা চলছে। ইউনেস্কোর কাছেও সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘সমস্যা হচ্ছে নয়া গ্রামের এলাকা ছোট। তাই আশপাশে বড় জমির খোঁজ চলছে। যাতে প্রত্যেক পটুয়া পরিবারের বাড়ির সামনে শিল্প সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করা যাবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ব্যাপারে খুব আগ্রহী।’’ মন্ত্রীর অনুযোগ, ‘‘এতদিন মেলাতে না থাকত রাজ্য সরকারের সাহায্যের কোনও বিবরণ, না থাকত মুখ্যমন্ত্রীর কোনও ছবি। নয়ার উন্নতির পিছনে যাঁর মূল ভূমিকা, তাঁকেই অস্বীকার করা যায় কী ভাবে?’’ যদিও সন-তারিখের হিসেব বলছে, ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল ‘পটমায়া’। তখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার গড়েননি।
‘বাংলা নাটক ডট কম’এর পক্ষে অমিতাভ ভট্টাচার্য সরকারি উদ্যোগে মেলার বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘মেলা হবে, খুব ভাল খবর।’’ স্বর্ণ চিত্রকর অবশ্য পটুয়াদের উন্নতির জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন ‘বাংলা নাটক ডট কম’কেই। পট আর পটের গান নিয়ে নানা দেশ ঘুরে আসা এই শিল্পী বললেন, ‘‘বাংলা নাটক (ডট কম) এবার নেই, আমার কাছে খুব খারাপ খবর। এই জায়গায় আসতে পেরেছি তো তাদেরই জন্য। কেউ কিছু বললে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলাও বাংলা নাটকের দাদা দিদিরাই শিখিয়েছিলেন। তবে মেলা হবে সেটা খুব ভাল খবর।’’