স্থানীয়দের বাধার মুখে পর্যটকেরা। শুক্রবার দিঘায়। নিজস্ব চিত্র
মাঝে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধান। ফের একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এ বার দিঘায়। বেড়াতে এসে স্থানীয়দের বাধায় হোটেলে থাকতে না পেরে ফিরে যেতে হল এক দম্পতি-সহ কয়েক জন পর্যটককে।
রাজ্য সরকারের পর্যটন কেন্দ্র ও হোটেল খোলার নির্দেশের পরেও মন্দারমণি ও দিঘার মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে বারবার এ ধরনের অশান্তিতে হোটেল ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি স্থানীয়দের রুটিরুজি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা মেনে হোটেল খোলা হয়েছিল। করোনা সতর্কতা বিধি কঠোর ভাবে মানার জন্যও হোটেল মালিকদের বলা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়রা যে ভাবে আপত্তি তুলছেন, বাধা দিচ্ছেন তাতে ব্যবসা পরিচালনা ক্রমশ দুরূহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনকেও পাশে পাওয়া যাচ্ছে না।’’ এই অবস্থায় পর্যটন শিল্পের হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে নিউ দিঘার অমরাবতী পার্কের কাছে বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালায় স্থানীয় একটি মহিলা সংগঠন। আপাতত দিঘায় কোনও হোটেলে পর্যটক রাখা যাবে না বলে তারা দাবি করে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে একটি হোটেলে উঠেছিলেন কলকাতার সরশুনা এলাকার এক দম্পতি। শনিবার সকালে তাঁদের ফেরার কথা ছিল। ওই দম্পতি জানান, শুক্রবার সকালে তাঁরা হোটেলের সামনে বেশ কিছু মহিলার চিৎকার শুনতে পান। ওই মহিলাদের কয়েকজন তাঁদের হোটেল ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা দু’জনে হোটেল ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় রওনা হন। এ দিন স্থানীয়দের বিক্ষোভে হাওড়া থেকে দিঘায় ঘুরতে আসা দুই বন্ধুও বাড়ি ফিরে যান। নিউ দিঘার একটি হোটেলের ম্যানেজার অতনু মণ্ডল বলেন, ‘‘স্থানীয় ২০-২৫ জন মহিলা এদিন সকালে হোটেলে এসেছিলেন। পর্যটক এলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আপাতত হোটেল বন্ধ রাখতে বলেছেন।’’
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে মন্দারমণিতেও একই ঘটনায় ফিরে যেতে বাধ্য হন পর্যটকেরা। বার বার এমন ঘটনায় জেলার পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা পর্যটন ব্যবাসায়ীদের। এক হোটেল ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘সরকারি নির্দেশ মেনে হোটেল খুলেছি। অথচ স্থানীয়রা এভাবে আপত্তি করলে, ব্যবসায় বাধা প্রশাসনের পাশে থাকা উচিত।’’ এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)। এদিন যারা হোটেলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তাদের দিঘা থানায় ডেকে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে পুলিশের তরফে বোঝানো হবে। পাশাপাশি অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য এলাকায় প্রচার অভিযান চালানো হবে বলে ডিএসডিএ সূত্রে জানানো হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘হোটেল খোলার পর প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা কিছু সমস্যা করেছে বলে শুনেছি। সরকারি নির্দেশিকা কার্যকর করতে যাতে অসুবিধে না হয় তার জন্য প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ করা হবে।’’
এদিন দিঘায় আন্দোলনকারী মহিলা সংগঠনের এক সদস্যের দাবি, পর্যটন শিল্প বন্ধ থাকলে স্থানীয়দের উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে এটা ঠিক। তবে জুন মাসে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই দিঘাকে বিপদমুক্ত রাখার জন্য হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত হোটেল বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হচ্ছে। কোথাও কোনও অশান্তি করা হয়নি।