শীঘ্রই এই দৃশ্য আর দেখা যাবে না দিঘায়। নিজস্ব চিত্র
পুজোর মুখে ভিড় বাড়বে দিঘায়। অন্য বছর তাতে খুশিই হতেন সুরজ সাহা, তানেজা বিবিরা।
কিন্তু এ বছর তাঁদের মুখ ব্যাজার। কারণ, পর্যটকদের নিরাপত্তার খাতিরে শুক্রবার থেকে কার্যত বন্ধ হয়ে চলেছে তাঁদের রুজি রোজগার।
দিঘার সৈকতে ঘোড়সওয়ারি করান সুরজেরা। পর্যটকদের ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে এবং ছোটদের রিমোট কন্ট্রোলের গাড়িতে ঘুরিয়ে অর্থ উপার্জন করেন তাঁরা। কিন্তু শুক্রবার জেলা প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সৈকতে ঘোড়ার চলাচল এবং রিমোট গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। এতেই চিন্তত ওই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। তাঁদের বক্তব্য, এমন নির্দেশ জারি হওয়ায় তাঁদের পুজো কাটবে নিরানন্দেই।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার মাইকে প্রচার করে জানানো হয়, সৈকতে ঘোড়া এবং রিমোট চালিত ছোট গাড়ি চালানো যাবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঘোড়া এবং রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। নিয়ম ভাঙলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। ওই ঘোষণার পরেই সৈকত শহরে অনেকে কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন।
ওল্ড দিঘায় সমুদ্রের পাশে ঝুপড়িতে থাকেন তানেজা বিবি। শনিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, তাঁর ঝুপড়ির পিছনে দু’টি ঘোড়া বাঁধা রয়েছে। তানেজা বলেন, ‘‘শুক্রবার প্রশাসনের লোকেরা মাইকে করে জানিয়েছেন, ঘোড়া চালানো যাবে না। প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত মানলে আমরা খাব কীল’’ আরও এক ঘোড়াসওয়ারি সুরজ বলেন, ‘‘পর্যটকদের ঘোড়ায় চাপিয়ে রোজ শ-পাঁচেক টাকা উপার্জন করতাম। সৈকতে ঘোড়া চালানো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কথা ভেবে অন্য কোনও জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত।’’
ঘোড়সওয়ারিদের একাংশ জনাচ্ছেন, ব্রিটিশ আমলে দিঘার সৈকতে ঘোড়ার চালানোর চল ছিল। এক সময় ব্লু ভিউ ঘাটের কাছে ঘোড়াশালাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই ঘোড়াশালার অস্তিত্ব আজ আর নেই। বর্তমানে ঝাউ জঙ্গলের ভিতর যত্রতত্র ঘোড়া ধুরে বেড়ায়। শুধু ওল্ড দিঘায় তেই অন্তত ৫৫টি ঘোড়া ঘুরে বেড়ায়।
প্রশাসনের দাবি, বর্তমানে দিঘায় পর্যটকের সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটা বড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সৈকতে রিমোট-গাড়ি এবং ঘোড়ার চলাচলে অনেক সময় পর্যটকেরা অসুবিধার মুখে পড়েন। ধাক্কারও ভয় থাকে। অভিযোগ, অনেক সময় ঘোড়ার ধাক্কায় পর্যটকেরাও আহত হয়েছেন। ওই সব ঘটনা এড়াতেই ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি বলেন, ‘‘পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই সৈকতে ঘোড়া এবং রিমোট-গাড়ি চালানো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, পাঁচ বছর আগেও সৈকতে ঘোড়া চালানো এবং সমুদ্রে টিউব নিয়ে স্নান করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। টিউব নিয়ে স্নান বন্ধ হলেও ঘোড়া চলাচল বন্ধ হয়নি। কিন্তু এবারের ফের নিষেধাজ্ঞা যে কঠোর ভাবে জারি করা হয়েছে, সে বিষয়ে সাফ জানিয়েছে প্রশাসন। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘সৈকতে ঘোড়া চলার ফলে পর্যটকদের অসুবিধে হচ্ছিল। তাই সৈকত এবং সৈকত সরণিতে ঘোড়া এবং রিমোট-গাড়ি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’ ঘোড়া এবং গাড়ি অন্য কোথাও চালানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন বা দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শহরের অন্য কোথাও তাঁরা তা চালাতেই পারেন।’’
শনিবার রাতে দিঘার ঘোড়সওয়ারিদের একটি প্রতিনিধি দল কাঁথিতে এসে দেখা করে সাংসদ ও দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারীর সঙ্গে। সেখানে তাঁরা বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি জানান। যদিও সাংসদ স্পষ্ট বলেন, ‘‘ঘোড়ার জন্য দিঘাতে দূষণ ছড়াচ্ছে। পর্যটকরা আহত হচ্ছেন। তাই আর সৈকতে ঘোড়া চলতে দেওয়া হবে না।’’