Mahisadal Ratha Yatra

‘বুড়ো’ রথের শরীর আগে, রাশ আবেগে

প্রশাসন সূত্রের খবর, কাঠের এই রথ কার্যত জীর্ণ হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর কিছু কিছু অংশ সংস্কার করা হয়।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

মহিষাদল শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:৩৬
Share:

হলদিয়া মাখনবাবুর বাজারে চলছে রথ সাজানো। নিজস্ব চিত্র।

তিনি ‘বৃদ্ধ’ হয়েছেন। বয়স ছাড়িয়েছে আড়াইশো। সংস্কারের পরেও তাই শরীরে থেকে গিয়েছে ‘ব্যাধি’। রশিতে টান পড়ার আগে তাই মহিষাদলের প্রাচীন রথের কিছু ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক করছে প্রশাসন।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গে প্রাচীনত্বের দিক থেকে মাহেশের পরই মহিষাদলের রথের স্থান। ঐতিহ্য, রাজকীয় আড়ম্বর, জনগণের উৎসাহ নিয়ে চলে এই রথ। রানী জানকীর উদ্যোগে প্রায় ২৫০ বছর আগে এই রথযাত্রার পথ চলা শুরু। রথের রশিতে টান দিতে দূরদূরান্ত থেকে কাতারে কাতারে দর্শনার্থী ভিড় জমান। পুরীর রথে যেমন পুরীর রাজ পরিবার অংশগ্রহণ করে, মহিষাদলের রথেও থাকে সেখানের রাজ পরিবার। তবে আজ, রবিবার রথযাত্রার আগে রথের কাঠামো পরিদর্শন করে হলদিয়ার মহকুমাশাসককে রিপোর্ট দিয়েছে পূর্ত দফতর। তাতে রথের ‘স্বাস্থ্য’ সম্পর্কে কিছু উদ্বেগের উল্লেখ রয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কাঠের এই রথ কার্যত জীর্ণ হয়ে গিয়েছে। প্রতি বছর কিছু কিছু অংশ সংস্কার করা হয়। এ বছরও মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে রথের কয়েকটি চাকা এবং অ্যাক্সেল সংস্কার করা হয়েছে। তবে তা যথেষ্ট কি না, সে ব্যাপারে জানতে মহকুমাশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় পূর্ত দফতরকে সমীক্ষা করতে বলেছিলেন। সেই রিপোর্টে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারের জানিয়েছেন, বয়সের ভারে জীর্ণ এই কাঠের রথের কাঠামোর অবস্থা একেবারই ভাল নয়। রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, রথের উপর বেশি ভার পড়লে বিপদ হতে পারে। এছাড়া, রথের সামনে দড়ি টানার জন্য পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে হলিদায়ার মহকুমাশাসককে বলেন, ‘‘আমি ওই রিপোর্টের কথা পুলিশ প্রশাসন এবং রথ পরিচালন কমিটিকে জানিয়েছি। নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।’’

Advertisement

রথ পরিচালন কমিটি সূত্রের খবর, ১৮৬০ সালে রাজা লছমন প্রসাদ গর্গের আমলে একবার রথের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার হয়। তখন ফরাসি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে রথের খিলানের উপর চারটি চূড়া বাদ দিয়ে ১৩টি চূড়া বিশিষ্ট করা হয়। রথের প্রত্যেক তলার চারপাশে একটি ঘুরবারান্দা করা হয়। কলকাতা থেকে মিস্ত্রি এসে নতুন করে রথটি করে। এখনও সেই রথ চলছে। মাঝে মধ্যে সংস্কার হয়। কাঠের এই রথে রয়েছে ৩৪টি চাকা। এক-একটি চাকা সংস্কার করতেই খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা।

মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী জানান, শুভেন্দু অধিকারী যখন সাংসদ ছিলেন, তখন বিভিন্ন শিল্প সংস্থার আর্থিক সাহায্যে রথের আমূল সংস্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি রথের জন্য টাকা দিতে পারে না। বিভিন্ন শিল্প সংস্থার কাছ থেকেই সিএসআর-এর টাকায় রথের সংস্কার করতে হবে।’’

রিপোর্টের পরে এ বার কী ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে? বিধায়ক জানান, রথের উপরে অন্তত ৭০-৭৫ জন থাকেন। সেই সংখ্যা এ বার কমানো হবে। রথের সামনে কিছু জায়গা ফাঁকা রাখা হবে। আর ভেজানো হবে রাস্তা। তিলক বলেন, ‘‘খুব চাই বৃষ্টি হোক। বৃষ্টি হলে রথের চাকার উপরে চাপ পড়বে কম। সহজে গড়াবে। না হলে রাস্তা এবং রথের চাকা ভেজাতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement