সোনাচূড়ার এই জমি ঘিরেই বেধেছে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
জমি-আন্দোলনের আঁতুড়ে প্রস্তাবিত রামমন্দিরের জমি নিয়ে বাধল বিতর্ক। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর নিজস্ব জমিতে রামমন্দির তৈরির ঘোষণা করেছেন। তবে তৃণমূল শিবিরের অভিযোগ, শুভেন্দু তাদের দলের সাংসদ থাকাকালীন নিজের নামে এই জমি কিনেছিলেন। কথা দিয়েছিলেন, সেখানে হাসপাতাল হবে। শুভেন্দু অভিযোগে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বিজেপি শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, পূর্ব মেদিনীপুরে হিন্দু ভাবাবেগ টানার চেষ্টা হচ্ছে নন্দীগ্রামে রামমন্দির করে। তাতে উদ্বিগ্ন তৃণমূল জমি নিয়ে বিতর্ক বাধাতে চাইছে। কারণ, জেলায় ২২% সংখ্যালঘু ভোট শাসক দলের ভরসা।
গত ২৩ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের সোনাচূড়ায় রামমন্দির তৈরির ঘোষণা করে বলেন, ‘‘সোনাচূড়ায় আমার আড়াই বিঘা জমি কেনা আছে। ওই জমিতেই রামমন্দির তৈরি করা হবে। রামনবমীর দিন হবে ভিতপুজো।’’
সোনাচূড়ার এই জমি (তালিকায় চিহ্নিত) নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের দাবি, ২০০৯ সালে তাদের দলের সাংসদ হয়ে শুভেন্দু ওই এলাকায় ‘শহিদ স্মৃতি হাসপাতাল’ করবেন বলে প্রায় চার বিঘা জমি কেনেন। ‘২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর উন্নয়নের খতিয়ান’ নামক পুস্তিকার ১৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উন্নয়নমূলক কাজের তালিকায় ১৪ লক্ষ টাকায় জমি কেনার উল্লেখও আছে। তৃণমূলের দাবি, হাসপাতাল হবে বলে তৎকালীন বাজারমূল্যের (প্রায় ২১ লক্ষ টাকা) থেকে অনেক কম দামে জমি কেনেন শুভেন্দু। বর্তমান এর মূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা। সোনাচূড়া অঞ্চল তৃণমূলের তৎকালীন সভাপতি রাধাকৃষ্ণ মণ্ডলের দাবি, ‘‘আমরাই তখন একাধিক জমির মালিককে বুঝিয়ে অনেক কম দামে জমি সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। পরে, উনি (শুভেন্দু) নিজের নামে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন দেখে প্রতিবাদ করা হয়। তখন বলেছিলেন, এলাকায় ট্রাস্ট গড়ে ওই জমি দান করে দেবেন। এখন সেখানেই মন্দির করবেন বলছেন।’’ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষও বলছেন, ‘‘এটা এলাকাবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’’
শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘যারা অভিযোগ করছে, প্রথমে প্রমাণ দেওয়ার দায়িত্ব তাদের। হাসপাতালের নামে জমি দিয়েছিল লোকে, এই রকম চুক্তিপত্র দেখাক। তার পরে মন্তব্য করব।’’ তবে শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, ‘সামাজিক কাজের’ জন্য জমির আবেদন করা হয়েছিল। হাসপাতাল বা নির্দিষ্ট প্রকল্পের কথা বলে পদক্ষেপ হয়নি। যে রামমন্দিরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা-ও ‘সামাজিক কাজের’ আওতায় পড়ে। মন্দির সংলগ্ন আয়ুর্বেদিক, হোমিয়োপ্যাথিক ঔষধালয়ও থাকবে। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পালের মতে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র বলে জগন্নাথ মন্দির করছেন। তা হলে শুভেন্দু নন্দীগ্রামে রামমন্দির করলে আপত্তি কিসের!’’