Labor Protest

শ্রমিক বিক্ষোভে উৎপাদন বন্ধ

সোমবার দুপুরে হলদিয়ার একটি ভোজ্য তেল কারখানায় নতুন বেতনক্রম ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের দৈনিক মূল বেতন (বেসিক) ১৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪৪ টাকা করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ০৬:২৫
Share:

সোমবার রাতভর ঘেরাও করে রাখা হল কারখানার আধিকারিকদের। প্রতীকী ছবি।

শ্রমিক অন্তোষে কারখানার উৎপাদনে যাতে প্রভাব না পড়ে, হলদিয়ায় এসে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর না ঘুরতে পূর্ব মেদিনীপুরের সেই শিল্পশহরেই উৎপাদন বন্ধ করে চলল শ্রমিক বিক্ষোভ। সোমবার রাতভর ঘেরাও করে রাখা হল কারখানার আধিকারিকদের। ঘেরাও হন শ্রমিক নেতারাও। মঙ্গলবার বৈঠকে অবশ্য জট কেটেছে। এই আবহে হলদিয়ায় এসে এ দিন শিল্প-পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

Advertisement

সোমবার দুপুরে হলদিয়ার একটি ভোজ্য তেল কারখানায় নতুন বেতনক্রম ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের দৈনিক মূল বেতন (বেসিক) ১৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪৪ টাকা করা হয়। অন্য সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে মাসিক বেতন ১১,২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪,৫৭৫ টাকা করা হয়। কিন্তু এই বেতনক্রমে অখুশি শ্রমিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী দৈনিক মূল বেতন ৩৫০ টাকা করতে হবে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ রাজি হননি। এরপরই শ্রমিকেরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন। ঘেরাও করা হয় আধিকারিকদের।

শ্রমিক নেতাদের এবং পুলিশে খবর দেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শ্রমিক নেতারা কারখানায় যান। কিন্তু তাঁরাও ঘেরাও হয়ে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের সঙ্গে গোপনে বোঝাপড়া করছেন শ্রমিক নেতারা। পরে পৌঁছয় ভবানীপুর থানার পুলিশ। রাতভর আলোচনা চালিয়ে ভোররাত ৩টা নাগাদ ঘেরাও মুক্ত হন আধিকারিক ও নেতারা। এ দিন সকালে হলদিয়ায় ডেপুটি লেবার কমিশনারের অফিসে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। ছিলেন ডেপুটি লেবার কমিশনার সুদীপ্ত সামন্ত, যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি শেখ আসগর আলি, কারখানার আধিকারিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা। ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে দাবি সনদ। সন্ধ্যার পরে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন।

Advertisement

অভিষেকের বার্তার পরেও কেন এই পরিস্থিতি? তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তমলুক সাংগঠনিক জেলা আইনটিটিইউসি’র সভাপতি চন্দন দে বলেন, ‘‘বৈঠকে রয়েছি। পরে কথা বলব।’’ আর ফোন কেটে দেন যুব সভাপতি আসগর।

এ দিকে এ দিনই হলদিয়া রিফাইনারির অতিথি নিবাসে কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ও হলদিয়ার বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দুর কটাক্ষ, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জমি নীতির ফলে শুধু হলদিয়া কেন, পশ্চিমবঙ্গের কোথাও নতুন শিল্প হবে না। আমি নন্দীগ্রামে বাইপাস তৈরির সময় ৩.৫ একর জমি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখি, ১৩২টি পরিবারের মধ্যে ১২৯টি রাজি হলেও তিনটি পরিবার বেঁকে বসেছে। কোনও শিল্পপতির পক্ষে এ ভাবে জমি সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তাই কোনও শিল্পপতিও আসেনও না।’’ শুভেন্দুর দাবি, ‘‘আমার নেতৃত্বে তবুও হলদিয়া এনার্জি কারখানা তৈরির কাজ শেষ হয়। ইন্ডিয়ান অয়েলের ২০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিলেড ক্র্যাকার ইউনিট চালু হয়। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে হলদিয়ায় গুন্ডারাজ ও পুলিশরাজ চলছে। নেতারা টাকা তুলে কলকাতায় পাঠাচ্ছেন। পুলিশও টাকা তুলছে।’’ বিরোধী দলনেতার মতে, ‘‘আসলে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে রেফারির অভাব। একটা সময় আমি কিছুটা রেফারি করেছি।’’

হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় করের পাল্টা খোঁচা, ‘‘হলদিয়া থেকে মোটা টাকা তোলা যেত কাঁথির বাড়িতে। দু’বছর ধরে সেটা বন্ধ। আঁতে ঘা লেগেছে। তাই ভুল বকছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement