কুড়মালী নববর্ষ পালন। নিজস্ব চিত্র।
কুড়মি আদিবাসী সম্প্রদায়ের কুড়মালী নববর্ষ পালিত হল শুক্রবার। শুরু হল ২৭৭১ কুড়মাব্দ। দেশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে কুড়মী সম্প্রদায়ের মানুষ সকাল সকাল কৃষিকাজ দিয়ে এই শুভ দিনটি শুরু করেন।
মকর সংক্রান্তিতে টুসু পরব শেষে পিঠে পুলি খেয়ে টুসু ভাসিয়ে বছর শেষ করেন। কুড়মী সম্প্রদায় প্রকৃতির পুজারী। এঁরা কৃষি ভিত্তিক জীবন যাপন করেন। তাই কৃষি কাজের সূচনা করা হয় এই দিনে, যাকে বলা হয় হালচার বা হালপুইন্যা। সকালে সারা বাড়ি পরিষ্কার করার পর স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে গরু বা মোষ নিয়ে জমিতে আড়াই পাক লাঙ্গল দিয়ে বাড়িতে ফেরেন তাঁরা।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক খড়গপুর গ্রামীণের বাসিন্দা বিপ্লব মাহাত জানান, ভারতবর্ষের আদিমতম অধিবাসী মাহাত কুড়মি সম্প্রদায়। এঁরা মধু, বিহা, মওহা, নীরন, ধরন, বিহন, রপা, করম, টান, সহরই, মাইসর, জাড় এই ১২ মাসের হিসাবে চলেন। আর ১২ মাসই বিভিন্ন কৃষি ভিত্তিক আচার অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন। সবই প্রকৃতি কেন্দ্রিক। এদিন স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে বাড়িতে বরণ উপচার হাতে অপেক্ষা করেন বাড়ি বউরা। গরু বা মোষের পা ধুইয়ে সিঙে তেল সিন্দুর মাখিয়ে বরণ করে যত্ন সহকারে মানে (বেতের তৈরী পাত্র) করে খাওয়ানো হয়। আর এ ভাবেই কৃষি কাজের শুভসূচনা করেন কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ।
পশ্চিম মেদিনীপুর পুরুলিয়া বাঁকুড়া ছাড়াও ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং অসম-সহ গোটা ছোটনাগপুরের কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ এই রীতি পালন করেন। আদিবাসী কুড়মি সম্প্রদায়ের শিক্ষক বিপ্লব বলেন, “আমরা ভারতবর্ষের আদিম অদিবাসী। আমরা প্রকৃতির পূজারী। প্রকৃতিসৃজনই কৃষি। কৃষক ছাড়া আমাদের অন্ন কে যোগাবে? আমরা কৃষিনির্ভর সম্প্রদায়। তাই আমাদের এই কুড়মাব্দের প্রথম দিনটিকে আমরা শুভ মনে করি এবং এ দিন কৃষি কাজের শুভসূচনা করে থাকি। তা ছাড়াও এদিন বিভিন্ন জায়গায় গরাম পূজাও হয়।”