মৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর পড়িয়া। —ফাইল চিত্র।
কোলাঘাটে ব্যবসায়ী খুনের ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও এই গুলি করে হত্যার কোনও সূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ। মিলছে না আততায়ীদের খোঁজও। পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের উত্তর জিঞাদার বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর পড়িয়াকে যে ভাবে মাথায় গুলি করে করা হয়েছে, তা নিছক ছিনতাই করতে গিয়ে খুন না কি পুরনো কোনও শত্রুতার জের, তা বুঝতে দিনভর তদন্ত চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু, এখনও কোনও উত্তর মেলেনি।
সোমবার রাতে কোলাঘাটে জাতীয় সড়কে গুলি করে হত্যা করা হয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর পড়িয়াকে। মঙ্গলবার কোলাঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মৃতের স্ত্রী কৃষ্ণা। তিনি দাবি করছেন, মোটা অঙ্কের টাকা এবং অলঙ্কার হাতাতেই খুন করা হয়েছে স্বামীকে। তাঁর এ-ও দাবি, সমীরের ব্যাগে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার সোনা-রুপোর গয়না-সহ প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ছিল। সমীরের মৃত্যু নিয়ে দিনভর আলোচনা করেছেন স্থানীয়রা। এ সবের মধ্যে তাম্রলিপ্ত হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর সমীরের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাতে চোখের জলে পরিবারের বড় ছেলেকে বিদায় জানায় পড়িয়া পরিবার।
মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় আশপাশে পড়ে রয়েছে চাপচাপ রক্ত। পুলিশ এসে মৃতের মোটর বাইকটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে বেলা বাড়তেই শুরু হয়ে যায় পুলিশি তৎপরতা। তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থলের উল্টোদিকে রাস্তার ধারে থাকা একটি হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে প্রায় এক ঘণ্টা। তার পর তদন্তকারীরা যান কিছু দূরের একটি চালকলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিতে। এরই মাঝে আর একটি তদন্তকারী দল যায় মৃতের দোকানে। এলাকার বেশ কয়েক জন দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মৃত স্বর্ণকারের খুড়তুতো ভাই শুভেন্দু পড়িয়া এবং প্রতিবেশী অমরেশ (হরি) মণ্ডলকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে এই নৃশংস খুনের ঘটনায় কারা জড়িত, তদন্তপ্রক্রিয়া কোন জায়গায়, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জিঞাদা বাজার থেকে সমীর যখন ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠে উল্টো দিকের লেনে গিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন, সেই সময় একটি মোটর বাইকে করে আসেন তিন জন। তারা সম্ভবত হাওড়ার দিক থেকে এসে সমীরের পথ আটকে দাঁড়ায়। তার পর খুব কাছ থেকে তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। একটি লাগে সমীরের গালে। একটি তাঁর চোখের উপরের অংশে লেগে মাথার খুলি ফাটিয়ে দেয়। রাস্তার পাশেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, সমীরের গতিবিধি আগে থেকেই নজরে রেখেছিল দুষ্কৃতীরা। তাঁর কাছে যে মোটা অঙ্কের টাকা এবং গয়না ছিল, সে বিষয়েও জানত তারা। তা ছাড়া বন্দুক নিয়ে হামলা চালানো, খুব কাছ থেকে ঠান্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লুট করে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, এর পিছনে কোনও দাগী অপরাধীই জড়িত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাজারে থাকা মাত্র দু’টি সোনার দোকান আছে। কিন্তু সেখানে একাধিক বার ডাকাতি হয়েছে। জাতীয় সড়কের উপরেও দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চলে। একটু রাত বাড়লে জাতীয় সড়ক এবং তার আশপাশে অঞ্চল দৃষ্কৃতীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হয়ে পড়ে। বস্তুত, ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের কোলাঘাটের খানিক দূরেই হাওড়া জেলা, আবার পাঁশকুড়া থেকে কিছুটা গেলেই পশ্চিম মেদিনীপুর। সেখান থেকে কয়েক ঘণ্টা পাড়ি দিলেই চলে যাওয়া যায় বিহার অথবা ওড়িশায়। তাই পুলিশের তৎপরতা ছাড়া এই এলাকা দুষ্কৃতীমুক্ত হওয়া একেবারেই অসম্ভব বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী।