জয়ন্ত বর্মন। নিজস্ব চিত্র
পেটের দায়ে বিমা সংস্থায় সামান্য ঠিকাকর্মীর কাজ করে দিন গুজরান। মনে অবশ্য অফুরন্ত রং। তুলির ছোঁয়ায় সেই রং দিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে তাঁর ক্যানভাস। কাজ সেরে বাড়িতে ফিরে বাস্তবধর্মী মুহূর্তের অবয়বকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। সেই নমুনা পৌঁছেছিল রাশিয়ায়। বাছাই পর্ব শেষে মস্কোয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হাতছানি দিচ্ছে খড়্গপুরের চিত্রশিল্পী জয়ন্ত বর্মনকে। তবে পা টেনে ধরছে আর্থিক অভাব!
খড়্গপুর শহরের মালঞ্চর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের জয়ন্ত বর্মন এখন হতাশ। ডাক পেয়েও বিমানের টিকিট কাটতে পারছেন না তিনি। রং-তুলির শিল্পী জীবনের বাস্তব ক্যানভাসে আঁচড় কাঁটছে আর্থিক অভাব। ছবি দেখে পছন্দ হওয়ায় রাশিয়ার ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ সেন্টার অফ হিউম্যানিটেরিয়ান প্রোগ্রাম’ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে জয়ন্তকে। শুধু জয়ন্ত একা নন, ভারত থেকে এমন ন’জন শিল্পীর মধ্যে এ রাজ্য থেকে সুযোগ পেয়েছেন কলকাতার মনীষা দাসও। মস্কোয় অনুষ্ঠিত ‘রাশিয়ান আটলান্টিক-২০১৯’ শীর্ষক ওই প্রতিযোগিতায় আর্কিটেকচারাল ল্যান্ডস্কেপে ‘লাইভ’ ছবি আঁকতে হবে। কমপক্ষে ১০ দিন মস্কোয় থেকে জমা দিতে হবে ১০টি ছবি। তার মধ্যে থেকে বাছাই করা দু’টি ছবি প্রতিযোগিতায় স্থান পাবে। সাফল্য পেলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজের সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু অভাবকে দূরে সরিয়ে কী ভাবে সেই স্বপ্নের উড়ানে মস্কোয় পৌঁছবেন তা ভেবেই জয়ন্ত দিশাহারা।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাই আর্ট কলেজে পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। ছেলেবেলায় পাড়ার এক শিল্পীর কাছেই আঁকায় হাতেখড়ি হয়েছিল। পোর্ট্রেট আঁকতে ভালবাসেন জয়ন্ত। তবে ল্যান্ডস্কেপের সম্ভারও অফুরন্ত। সংসার চালোনের তাগিদেই যোগ দিয়েছেন একটি বিমা সংস্থার ঠিকাকর্মীর পদে। মা, বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে চলে সংসার। সুযোগ পেলেই তার সূক্ষ্ম তুলির টানে ফুটিয়ে তোলেন ছবি।
চলতি বছরের মার্চে চণ্ডীগড়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও কর্মশালায় দ্বিতীয় হয়েছেন। আগামী অক্টোবরে হতে চলা ইতালির ‘ফ্লোরেন্স বিনালে-২০১৯’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ওই প্রতিযোগিতার জন্য এসেছে ‘স্পনসর কিট’। জয়ন্ত অবশ্য বলছেন, “ইতালির ওই প্রতিযোগিতার জন্য ওঁরা স্পনসর কিট পাঠালেও এখনও অর্থের জোগান হয়নি। কেউ স্পনসর করতে আগ্রহ দেখাননি। জানি না কী হবে!”
রাশিয়ার এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আমন্ত্রণও এসেছে সম্প্রতি। আগামী ২০ অগস্টের মধ্যে মস্কোয় ওই প্রতিযোগিতায় যাওয়ার কথা রেলশহরের এই চিত্রশিল্পীর। তবে এখনও কাটা হয়নি বিমানের টিকিট। জয়ন্ত বলছেন, “আর্থিক অভাবেই বিমানের টিকিট কাটতে পারিনি। কোনও সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য ছাড়া এই স্বপ্ন পূরণ যে সম্ভব নয় তা বুঝতে পাচ্ছি।”
কথা বলতে বলতে চিত্রশিল্পীর চোখ দু’টি ছলছল করে ওঠে। ক্যানভাস গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা জল।