প্রতীকী ছবি।
আশা ছিল, কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠে আইটিআই কলেজ গড়ে উঠবে। সেখানে কারিগরি শিক্ষা পাবে ছেলেমেয়েরা। ওই জমিতে সেই সময় চাষের কাজ করা অনুপ, উত্তমের মতো অনেকেই ভেবেছিলেন সেখানে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে চাকরি করবেন। তাই কলেজ হবে জেনে তাঁরা অন্যত্র সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এত বছর ধরে আইটিআই তৈরি দূরের কথা, কয়েকটা কংক্রিটের স্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। ফলে কলেজের অপেক্ষায় থেকে হতাশ ওই এলাকার বাসিন্দারা ফের ওই জমিতে চাষ-আবাদ শুরু করেছেন।
অনুপ মাইতি নামে স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘এক সময় সরকারি ওই খাস জমিতে ইটভাটা ছিল। অনেকে চাষ-আবাদ করতেন। আইটিআই কলেজ হবে জেনে আমার মতো অনেকেই আশার আলো দেখেছিলাম। কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে ঠিকাদার পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায়। ব্যস ওই পর্যন্তই। কলেজ আর হল না। মাঝখান থেকে ওখানে যে চাষ করতাম তাও বন্ধ হয়ে গেল।’’ আর এক বাসিন্দা উত্তম মাইতি বলেন, ‘‘কলেজ আর হল কোথায়! তা ছাড়া দু’বছর ধরে করোনার কারণে অনেকেরই আর্থিক অবস্থা খারাপ। তাই অনেকে ওই জমিতে নতুন করে ধান চাষ শুরু করেছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১০ সালে জেলায় দেশপ্রাণ ব্লকের মহিষামুন্ডা, এগরার কেয়া এবং কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠে একই সঙ্গে আইটিআই কলেজ নির্মাণ শুরু হয়। ওই বছর নভেম্বর মাসে তৎকালীন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী দুরমুঠে আইটিআই কলেজের শিলান্যাস করেন। সাত একর সরকারি খাস জমিতে কলেজে তৈরি শুরু হয়। সেখানে একটি ইটভাটা ছিল। বেশ কয়েকটি পরিবারও বাস করত। তারা সেখানে চাষাবাদ করতো। কলেজ হবে জেনে সকলেই অন্যত্র সরে যায়। প্রাথমিকভাবে কিছু কাজ হওয়ার পর ঠিকাদার সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায়।
যদিও ওই আইটিআই কলেজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই জানা নেই বলে দাবি ব্লক প্রশাসনের। কাঁথি-৩ এর বিডিও নেহাল আহমেদ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় গিয়ে শুধু কয়েকটা পিলার দেখেছিলাম। আইটিআই কলেজ সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র আমাদের কাছে না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবে ওই জমিতে চাষাবাদ শুরুর বিষয়টি জানা নেই। সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।’’
আইটিআই কলেজ তৈরি না হওয়ার জন্য বর্তমান শাসক দলের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছে বিরোধীরা। স্থানীয় সিপিএম নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, ‘‘বেকারদের স্বনির্ভর করে তুলতে ব্লক পিছু একটি আইটিআই কলেজ তৈরির উদ্যোগ শুরু করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে একেবারে উদাসীন।যে জমিতে কলেজ তৈরির কথা, সেখানে যদি চাষের কাজ শুরু হয় তা শিক্ষিতদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’
যদিও রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতি ব্লকে আইটিআই কলেজ তৈরির কথা বলেছিলেন। কলেজ না হওয়ায় হতাশ ওই এলাকার প্রায় চল্লিশটি পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কলেজই যখন হল না তখন ওই জমিতে চাষ করে অন্তত ভাতের জোগাড় তো করি।’’ তবে আইটিআই কলেজ নির্মাণের কাজ কেন থমকে তা খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিকাশ বেজ।