দিলীপ ঘোষ এবং পুড়ে যাওয়া মণ্ডপের একাংশ (বাঁ দিক থেকে) —নিজস্ব চিত্র।
মণ্ডপসজ্জা শেষ। মাঝে বাকি আর দুটো রাত। তার পরেই ঢাকঢোল পিটিয়ে শ্যামা পুজোর উদ্বোধন হওয়ার কথা। ফিতে কাটবেন পুজোর মুখ্য অতিথি মেদিনীপুরের সাংসদ তথা বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। গোল বাধল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। আড়াইটে নাগাদ দাউদাউ করে জ্বলতে লাগল মণ্ডপ। খবর পেয়ে তাজ্জব পুজো উদ্যোক্তারাও। কোনও রকমে আগুন নেভালেও ততক্ষণে মণ্ডপের প্রায় ৬০ ভাগই পুড়ে ছাই। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কৃষ্ণগঞ্জ বাজারের ঘটনা। যে ক্লাব এই পুজো করছে, তার উদ্যোক্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে এই পুজো হবেই। এবং পূর্ব ঘোষিত সূচিতে কোনও ছেদ পড়বে না।
তবে এমন কাণ্ড কী ভাবে হল, তা নিয়ে জোরদার জল্পনা শুরু হয়েছে। ক্লাবের কর্তাব্যক্তিরা সরাসরি কোনও ব্যক্তিকে কাঠগড়ায় না তুললেও এর পিছনে ‘রাজনৈতিক শত্রুতা’ রয়েছে বলে দাবি করেছেন। অন্য দিকে, তৃণমূলের কটাক্ষ, শুভেন্দুর জেলায় দিলীপ ঘোষকে দিয়ে মণ্ডপ উদ্বোধনের চেষ্টার ‘ফল ভুগতে হচ্ছে’ উদ্যোক্তাদের। তারা এই ঘটনার নেপথ্যে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলকে দায়ী করছে। অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, গেরুয়া শিবিরে ফাটল ধরাতে ‘গেম’ খেলছে শাসকদল। তবে আসল কারণ যাই হোক না কেন গোটা ঘটনায় চরম অসন্তুষ্ট এলাকাবাসীরা। পুজো নিয়ে এমন ‘রাজনৈতিক খেলা’ বন্ধের কথা বলছেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সম্পাদক তথা স্থানীয় কাঁকুড়দা অঞ্চলের উপপ্রধান মৈনাক জানা বলেন, ‘‘আমাদের কালীপুজো দীর্ঘ দিনের। এ বার পুজোর উদ্বোধন করতে আসছেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু পুজোর এক দিন আগে রাত আড়াইটে নাগাদ কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে মণ্ডপে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির গায়ে হয়ত জ্বালা ধরেছে। তাই এ ভাবে মণ্ডপে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমরা মণ্ডপ দ্রুত মেরামত করে রবিবারই দিলীপবাবুকে দিয়ে উদ্বোধন করাব।’’ এই ঘটনা নিয়ে জেলা তৃণমূল কমিটির সহ-সভাপতি শরৎ চন্দ্র মেট্যার মত, ‘‘অগ্নিকাণ্ডের পিছনে বিজেপিরই আর এক গোষ্ঠী যুক্ত। কারণ, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক জুড়ে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। শুভেন্দু অধিকারীর এলাকায় দিলীপ ঘোষকে ডাকার জন্যই নব্য গোষ্ঠীর গোসা হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করলেই গোটা বিষয়টি সামনে চলে আসবে।’’
যদিও শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিজেপির কনভেনার গোবিন্দ সাহু জানান, তাঁদের দলের কোনও সমস্যা হলে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটে যায়। কিন্তু সেই সুযোগে তৃণমূলের লোকেরা গন্ডগোল পাকিয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার সাধারণ মানুষ এটা কোনও ভাবেই মেনে নেবেন না।’’