বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা পূর্ব মেদিনীপুরে একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন। ছবি পিটিআই।
বাইরের তাপমাত্রা তেমন চড়েনি এখনও। সভার তাপমাত্রাও তেমন চড়ল না। তবে যিনি ছিলেন সভার প্রধান আকর্ষণ তাঁর দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাটছাঁট হল দলীয় কর্মসূচি। কথা ছিল, রবিবার রামনগরের জনসভার পর জনসংযোগে কিছু সময় ব্যয় করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নডডা। কিন্তু জ্বর হওয়ায় মাত্র একজনের সঙ্গে কথা বলেই গাড়িতে উঠলেন নড্ডা।
এ দিন রামনগর স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে বিজেপির দলীয় সভার পর এলাকার পান চাষী এবং মৎস্যজীবীদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করার কথা ছিল নডডার। যেহেতু উপকূলবর্তী এলাকা তাই রামনগরের দু’টি ব্লকের ১৬ জন মৎস্যজীবী এবং ১৬ জন পান চাষীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দিঘায় হেলিকপ্টার থেকে নামার পর সড়কপথে রামনগরের সভায় হাজির হন নড্ডা। বক্তৃতার শুরুতেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানিয়ে দেন, ‘‘গাড়ি থেকে নামার সময় নড্ডাজির ১০৩ জ্বর রয়েছে। তবু তিনি দলীয় কর্মসূচিতে এসেছেন।’’ সুকান্তের এই কথার পরই সন্দেহ বাঁধে। তবে কি শেষপর্যন্ত দলীয় কর্মসূচি শেষ হবে!
বিরোধীদের ক্ষুরধার আক্রমণ নড্ডার বক্তৃতাশৈলী নয়। তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণাত্মক বক্তৃতায় তাই সভার তাপমাত্রা তেমন বাড়েনি। কিন্তু নড্ডার শরীর যে খুব একটা ভাল নেই তার ইঙ্গিত মিলেছে বক্তৃতার মাঝপথে তাঁকে একাধিকবার কাশতে দেখে। সর্বশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করার পর মঞ্চ থেকে নেমে অভিমন্যু মাজি নামে এক মৎস্যজীবীর সঙ্গে কথা বলেন নডডা। তার কী সমস্যা রয়েছে সে ব্যাপারে জানতে চান সর্বভারতীয় সভাপতি। অভিমন্যু দু-এক মিনিট নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং একটি লিখিত কপি তাঁর হাতে তুলে দেন। অভিমন্যু দিঘার অদূরে রামনগর-১ ব্লকের মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার একটি ছোট নৌকো রয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। তিনি বলছেন, ‘‘একটা সময় সমুদ্র অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু পর পর যে ভাবে সমুদ্র সামনের দিকে এগিয়ে আসছে তাতে জাল নিয়ে মাছ ধরতে যেতে অসুবিধা হচ্ছে। মাছ ধরার জাল ছিঁড়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আগে এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরিকেও এই সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। অনেক নেতাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু জালের সমস্যা মেটেনি। তবে দিল্লির অত বড় একজন নেতা আজ আমার নিজের মুখ থেকে যে সমস্যার কথা শুনেছেন তাতেই খুশি। আশা করছি কিছু একটা হবে।’’
অভিমন্যুর মতোই নডডার সঙ্গে কথা বলে সমস্যার কথা জানাতে এসেছিলেন পাশের গ্রামের বাসিন্দা রজনী বেরা এবং রামনগরের জলধা গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক পাত্র। কিন্তু তাঁরা কেউই দেখা করতে পারেননি। কার্তিকের দাবি, ‘‘শঙ্করপুরে নদীতে ড্রেজিং হয়নি। মাছ বিক্রি করতেও অসুবিধা হয়। সকলের স্বার্থে সমস্যার কথা জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু উনি এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে কথা বলতে পারছিলেন না। দেখা না হওয়ায় খারাপ লাগছে।’’ আমন্ত্রিত ছিলেন ৩২ জন। এসেছিলেন ৩০ জন। আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে যাননি জলেন্দ্র দোলুই। তবে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ জানা যায়নি।
এ দিন রামনগরে নডডার সভায় লোকের ভিড় সেরকম হয়নি। সভা শুরু হওয়ার দীর্ঘক্ষণ বাদে সামান্য কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক গিয়েছিলেন। যা নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসক দল। এ প্রসঙ্গে যুব তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘শুভেন্দু এবং সুকান্ত মজুমদারের মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। যাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে সুকান্ত মজুমদার সফল হয়েছেন এটা প্রমাণিত না হয় তার জন্য বিরোধী দলনেতা তলে তলে নিজের লোকেদেরকে সভায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। অত ছোট মাঠে তিরিশ শতাংশ লোক ভর্তি হয়নি।’’ কাঁথি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সহ সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘তৃণমূল নিজেদের সভায় অর্থ আর প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে লোক নিয়ে আসে। সেই অর্থে বিজেপি কি করতে পারে রামনগরের সভা তার প্রমাণ দিয়েছে। কুড়ি হাজার মানুষ এ দিন সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন।’’
ঋতু পরিবর্তন আসন্ন। আসবে বসন্ত। রাজ্যে পরিবর্তনের কথা বলেছেন নড্ডা। সংগঠনে আসবে বসন্ত?