সিপিএমের লোকাল কমিটির প্যাডের কাগজে লেখা চাকরির ‘সুপারিশপত্র’।
এসএসসি দুর্নীতি মামলা নিয়ে শোরগোলের আবহে এ বার নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল সিপিএমের লোকাল কমিটির প্যাডের কাগজে লেখা চাকরির ‘সুপারিশপত্র’। যদিও ভাইরাল হওয়া ওই সুপারিশপত্রের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসকদলকে লাগাতার বিঁধে চলেছে বিরোধীরা। এই টানাপড়েনের আবহে ওই ‘চিরকুট’ পোস্ট করে ফেসবুকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, এ ভাবেই বাম আমলে চাকরি দেওয়া হত। সম্প্রতি এমন অভিযোগ শোনা গিয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। বাম আমলের সেই ‘চিরকুট’ ভাইরাল হতেই সিপিএম ও তৃণমূলকে একই বন্ধনীতে রেখে কটাক্ষ করেছে বিজেপি।
শুক্রবার ফেসবুকে ভাইরাল হয় একটি পোস্ট। সেখানে দেখা গিয়েছে, মলিন একটি প্যাডের কাগজ। যার উপরে লাল রঙে ছাপানো লেখা, ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পাচরা লোকাল কমিটি। যিনি ছবিটি পোস্ট করেছেন, তিনি বিবরণীতে লিখেছেন, ‘আমরাও চিরকুটে প্রেম করতাম। কিন্তু সিপিএম চাকরি করত...।’ যে প্যাডের কাগজটি তিনি পোস্ট করেছেন, সেখানে দেখা যাচ্ছে, চিঠিটি ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর কমরেড খগেন্দ্রনাথ মাহাতোর উদ্দেশে লেখা হয়েছে। স্পষ্ট অক্ষরে সেখানে লেখা, ‘কমরেড, আমি শ্রী মোহিতলাল হাজরা গ্রাম পালজাগুল পোস্ট জাগুল জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর জানি ও চিনি। এবং খুব দুঃস্থ পরিবারের ছেলে। বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত। একে আপনার কাছে পাঠালাম। ধেড়ুয়া অঞ্চল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি পদে যে লোক নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে যাহাতে একে নেওয়া যায়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করছি। পরে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করে নেব।’ নীচে প্রেরকের নাম লেখা জয়জীম আহাম্মদ।
নেটমাধ্যমে এই চিঠি ছড়়িয়ে পড়তেই সিপিএমকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘সকাল থেকে চিঠিটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বলে শুনেছি। সিপিএম কী করেছিল, সেটা সকলেরই জানা। এ ভাবেই চাকরি হত। যে ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাতে বাম নেতাদের পরিবারের সদস্যেরা রয়েছেন।’’
অন্য দিকে, সিপিএম ও তৃণমূলকে একযোগে কটাক্ষ করে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অরূপ দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল আর সিপিএম মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ। এতে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’’
যদিও এতে বিতর্কের কিছু দেখছেন না সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধির কাছে যে কেউ আবেদন বা সুপারিশ করতেই পারেন। তা নিয়ে হইচই করার কিছু নেই। তা ছাড়া এমন কিছু হয়েছে কি না, তা-ও জানা নেই।’’
স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে জেলায় জেলায় বরখাস্ত শিক্ষকদের নামের তালিকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে। সেই তালিকায় বেশ কয়েক জন সিপিএম নেতার পরিবারের সদস্যদের নাম রয়েছে। যা নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। তার মধ্যে প্রকাশ্যে এল বাম আমলে লোকাল কমিটি থেকে পাঠানো চাকরির ‘সুপারিশপত্র’।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।