প্রতীকী ছবি।
তৃণমূলের ক্ষমতাসীন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষক বার্ধক্য ভাতার উপভোক্তা তালিকায় স্বাক্ষর করছেন না। এর ফলে ৮৯ জন উপভোক্তাকে কৃষক-বার্ধক্য ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। টাকা না পেয়ে কয়েকজন উপভোক্তা ‘দিদিকে বলো’ নম্বরে ফোন করে নালিশ জানিয়েছেন। এরপরই নবান্ন থেকে নির্দেশ এসেছে, দ্রুত উপভোক্তাদের ভাতা চালু করতে হবে।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জানতে চাইলে কী জবাব দেবেন ভেবেই থরহরিকম্প অবস্থা জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকদের।
গত বছর অক্টোবরে রাজ্যের ২২টি জেলার সঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকের প্রবীণ চাষিদের বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার। জামবনি ব্লকে প্রায় পাঁচশো চাষি আবেদন করেন। পঞ্চায়েত ভোট হয়ে গেলেও গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত তৃণমূলের গোষ্ঠী কাজিয়ায় জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচন করা যায়নি। সেই কারণে বিডিও-র কাছে জমা পড়া আবেদনপত্র গুলি ব্লক কৃষি দফতরের মাধ্যমে মহকুমা কৃষি দফতরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে স্ক্রুটিনি করে চূড়ান্ত ৮৯ জনের উপভোক্তা তালিকা তৈরি করে ফের ব্লকে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপরও পুতুল সই করেননি। বিডিও এবং ব্লক কৃষি আধিকারিক সই করলেও সভাপতির স্বাক্ষর না হলে ভাতা চালু করা যাবে না। ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা তন্ময় দাস বলেন, ‘‘বয়স্ক চাষিরা দফতরে এসে জানতে চাইছেন ভাতা কেন চালু হয়নি। চাষিদের স্বার্থে সভাপতিকে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার অনুরোধ করেছি।’’ জামবনির বিডিও সৈকত দে বলেন, ‘‘উপভোক্তা তালিকায় আমি স্বাক্ষর করে দিয়েছি। সভাপতি কেন স্বাক্ষর করেননি সেটা উনিই বলতে পারবেন।’’
কেন সই করছেন না? পুতুলের জবাব, ‘‘আমি সভাপতি হওয়ার আগে ওই তালিকা হয়েছে। অনেক প্রকৃত গরিব চাষিদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আমি নতুন করে তালিকা তৈরির দবি জানিয়েছি।’’ নিয়ম হল, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দরিদ্র চাষিরা অন্য ভাতার আওতায় না থাকলে কৃষক বার্ধক্য ভাতা পাওয়ার জন্য বিবেচিত হতে পারেন। ব্যাঙ্ক অ্যাউন্টের মাধ্যমে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়।
গত বছর নভেম্বরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন পুতুল। জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির ২০ জন সদস্যের মধ্যে ১৪ জন তৃণমূলের। ৫ জন বিজেপি-র এবং একজন সিপিএম সদস্য। তৃণমূলের ১৪ জনের মধ্যে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি নিশীথ মাহাতোও পঞ্চায়েত সমিতির অন্যতম সদস্য। পুতুল অবশ্য নিশীথের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের এসটি এসসি সেলের জেলা সভাপতি অর্জুন হাঁসদার অনুগামী। শাসকদলের অন্দরের খবর, তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে নিশীথের প্রভাব রয়েছে বলে আশঙ্কা পুতুলের। সেই কারণে তিনি তালিকায় স্বাক্ষর করছেন না। নিশীথ বলছেন, ‘‘তালিকা তৈরি করেছে কৃষি দফতর। এ ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের প্রশ্নই নেই। কিন্তু সে কথা পুতুল শুনছেনই না।’’
তবে প্রাপক-তালিকায় নিয়ে গোষ্ঠী কাজিয়ায় আখেরে দরিদ্র বয়স্ক চাষিরা ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পৌঁছেছে দিদির দফতরে। এখন দিদি-ই তাঁদের ভরসা!