দ্বিতীয় দিনে বাড়ল যাত্রী। রেল পুলিশের নজরদারিতে দূরত্ববিধি মেনে লোকাল ট্রেন থেকে নামছেন যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুর স্টেশনে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
করোনা আবহে লোকাল ট্রেন চালু হয়েছে। মাস্ক পড়া নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। রয়েছে রেল-রাজ্যের মান্য কার্যসম্পাদন পদ্ধতি বা এসওপি। সেখানেও মাস্ক, থার্মাল স্ক্যানিং, দূরত্ব বজায়, জীবাণুমুক্তি বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। অথচ করোনা বিধি কার্যকর করার প্রথম দিনের ঢিলেঢালা চেহারা আরও বেআব্রু লোকাল ট্রেন চালুর দ্বিতীয় দিনে।
বুধবার লোকাল ট্রেন চালুর প্রথম দিনে করোনা বিধি কার্যকরে ঢিলেঢালা ছবি নজরে এসেছিল খড়্গপুর স্টেশনে। থার্মাল স্ক্যানিং ছাড়াই স্টেশনে ঢুকেছিলেন যাত্রীরা। কামরা জীবাণুমুক্ত করার বদলে আসনের ধুলো পরিষ্কার করতে হয়েছিল যাত্রীদেরই। তবে যাত্রীদের মুখে ছিল মাস্ক। স্টেশন চত্বরে দেখা গিয়েছিল আরপিএফ ও রাজ্য রেল পুলিশকে। দ্বিতীয় দিন, বৃহস্পতিবারে পরিস্থিতির উন্নতির বদলে অবনতির ছবিই ধরা পড়েছে। এ দিন অধিকাংশ সময়েই থার্মাল স্ক্যানিং ছাড়াই স্টেশনে অবাধে প্রবেশ করেছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের একাংশ স্টেশনে ঢুকেছেন মাস্ক ছাড়াই। প্ল্যাটফর্মে দূরত্ববিধি কার্যকর করতেও দেখা যায়নি আরপিএফকে। ট্রেন পৌঁছনোর পর রেল পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারদের কয়েকজনকে প্ল্যাটফর্মে দেখা গিয়েছে। ট্রেনে উঠে সচেতনতা প্রচারও করেছেন তাঁরা। ব্যাস ওই পর্যন্তই।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?
সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আদিত্য চৌধুরী বলেন, “আপনি আগে ‘এসওপি’ পড়ুন।” কিন্তু ‘এসওপি’তে কি থার্মাল স্ক্যানিং, মাস্ক ছাড়া যাত্রীদের ট্রেন যাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়েছে? আদিত্য কোনও সদুত্তর না দিয়ে শুধু ‘এসওপি’ পড়ার কথাই বলে গিয়েছেন। তবে ডিআরএম মনোরঞ্জন প্রধান বলেন, “রেল-রাজ্য যৌথভাবে এসওপি তৈরি হয়েছে। সেখানে থার্মাল স্ক্যানিং রাজ্যের বিষয়। তবে যাত্রীদের কেউ যদি স্টেশনে ঢোকার পরে মাস্ক খুলে দেয় তবে সেই প্রবণতা ঠেকানো কঠিন।’’ তবে এর পাশাপাশি ডিআরএম এ-ও জানাতে ভোলেননি, ‘‘আরপিএফদের আজকে একটি অনুষ্ঠান থাকায় কিছুক্ষণের জন্য ওঁরা হয়তো ছিল না। তবে আমি প্রতিটি বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করব।”
এসওপি সম্পর্কে জানেন না যাত্রীদের অনেকেই। তবে এ দিন স্টেশনে এসে পরিস্থিতি দেখে অবাক হয়েছেন তাঁরা। খড়্গপুর থেকে লোকাল ট্রেনে ওঠা ভোগপুরের যাত্রী অরবিন্দ গাঁতাইত বলেন, “আমি ভেবেছিলাম খড়্গপুরের মতো স্টেশনে ঢোকার সময় করোনা বিধি পালন করা হবে। কিন্তু কিছুই তো হল না! থার্মাল স্ক্যানিং ছাড়াই প্ল্যাটফর্মে এলাম। এখন তো দেখছি অনেকের মাস্ক নেই।” আবার বালিচকের যাত্রী হর্ষিত মাইতি বলেন, “আমরা এক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে খড়্গপুর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে লোকাল ট্রেন নিরাপদ ভেবে এসেছি। কিন্তু দেখলাম খড়্গপুর স্টেশনে কিছুই পালন হচ্ছে না।”
শুধু সদর খড়্গপুর নয়, ডিভিশনে মেদিনীপুর, গিরি ময়দান, গোকুলপুর, জকপুর, বালিচক, হাউর, পাঁশকুড়া-সহ ছোট স্টেশনগুলিতে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর বলে অভিযোগ। যদিও এ দিন খড়্গপুর স্টেশন পরিদর্শন করেছেন রাজ্য রেল পুলিশের সুপার অবদেশ পাঠক, ডেপুটি সুপার শেখর রায় প্রমুখ। শেখর বলেন, “আমরা তো ট্রেনে সচেতনতা প্রচার করছি। নজরদারিও চলছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।”