জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও ঝাড়গ্রামে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটের আগে জাতিসত্তার দাবি নিয়ে তেতে উঠছে জঙ্গলমহল। সোমবার সেই উত্তাপের আঁচ পৌঁছেছে মহানগরীতেও। ঝাড়গ্রামে তাপমাত্রার পারদ ৪২-৪৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। জাতিসত্তার আবেগের পারদও সমান ঊর্ধ্বমুখী। সোমবার সকাল থেকে ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরের মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঘেরাও অবস্থান শুরু করেছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাদল কিস্কু গোষ্ঠী। বিকেলে ঘেরাও চলাকালীন শয়ে শয়ে অজস্র আদিবাসী জেলাশাসকের কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। অন্যদিকে, এদিনই জনজাতি তালিকা ভুক্তির দাবিতে কুড়মি সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের সাইকেল মিছিল করে কলকাতার সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) দফতরে পৌঁছয়। সিআরআই দফতরের পাশে গরাম থান স্থাপন করে ঘেরাও অবস্থান শুরু করেছে কুড়মিরাও।
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাদল কিস্কু গোষ্ঠীর দাবি, কুড়মি সহ অন্য কোনও অ-আদিবাসী সম্প্রদায়কে জনজাতি (এসটি) তালিকাভুক্ত করা যাবে না। এ ছাড়াও সাঁওতালি শিক্ষা পর্ষদ গঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে সাঁওতালি মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কলা বিভাগে পড়াশোনার ব্যবস্থা, ঝাড়গ্রামের রামগড় ডিএলএড কলেজে সাঁওতালি মাধ্যমের আসন সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার মত ছ’দফা দাবিতে এ দিন সাত সকালে ওই আদিবাসী সংগঠনের লোকজন ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরের বাইরে ঘেরাও শুরু করেন। জেলাশাসকের দফতরের মূল বড় দরজা ও পাশের ছোট দরজা দু’টিতেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় পিছনের দরজাও।
ঘেরাওয়ের ফলে কর্মীরা ও বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা লোকজন এদিন জেলা শাসকের কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি। সকাল থেকেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে এদিন জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) পীযূষ গোস্বামী, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী ও মহকুমাশাসক (ঝাড়গ্রাম সদর) বাবুলাল মাহাতোকে দফতরে ঢুকতে দেওয়া হয়। আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিদের ডেকে কথা বলেন জেলাশাসক। আদিবাসী সংগঠনটির ঝাড়গ্রাম জেলা জগ পারগানা বিভীষণ হাঁসদা বলেন, ‘‘আদিবাসীদের ছ’শতাংশ সংরক্ষণ রয়েছে। কুড়মিদের ওবিসি সংরক্ষণ ২৭ শতাংশ। তবুও কুড়মিরা আদিবাসী হতে চাইছেন। এটা আদিবাসীদের নিঃশেষ করার চক্রান্ত।’’ তিনি জানান, সাঁওতালি শিক্ষা পর্ষদ গঠন সহ শিক্ষার দাবিগুলি নিয়ে রাজ্য শিক্ষা দফতরের মনোভাব বোঝার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ হবে। এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদও চড়া হতে থাকে। দলে দলে আদিবাসীরা তির-ধনুক-টাঙি নিয়ে শহরে মিছিল করে জেলা শাসকের দফতরের সামনে পৌঁছন। কুড়মিদের আদিবাসী করা যাবে না স্লোগান ওঠে মিছিল থেকে। বাইকে করেও স্লোগান দিতে দিতে আসেন আদিবাসীরা। বিকেলে আদিবাসী প্রতিনিধিদের সঙ্গে জেলাশাসক আলোচনা করছিলেন। সেই সময় দলে দলে সশস্ত্র আদিবাসী জেলাশাসকের দফতর চত্বরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মেলায় বিকেলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আদিবাসীরা। দলে দলে সশস্ত্র আদিবাসী ধামসা মাদল বাজিয়ে জেলাশাসকের দফতরে ঢুকে পড়েন। শয়ে শয়ে আদিবাসীরা জেলাশাসকের দফতরে ঘেরাও করে রেখেছেন। দফতরে ঘেরাও হয়ে আছেন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলা শাসকরা।কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তি দাবির বিরুদ্ধে ও রাজ্যজুড়ে আদিবাসী নিগ্রহের প্রতিবাদে আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান নামে একটি সংগঠন ১২ ঘন্টার বাংলা বনধ ডেকেছিল। তবে এদিন ঝাড়গ্রামে বনধের প্রভাব পড়েনি।