সংক্রমণের হার কমেছে। ভিড় বাড়ছে ঘাটালের কুঠিবাজারে। নিজস্ব চিত্র
ভিন্ রাজ্য ফেরতদের ঢল কমেছে। করোনা আক্রান্তের হারও এখন নিম্নমুখী।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে শুধুমাত্র ঘাটাল-দাসপুরেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ১৭৬। সেখানেই এখন সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা মাত্র পাঁচ জন। তবে এই পরিসংখ্যানে যাতে কোনওরকম আত্মতুষ্টি না আসে সেদিকে সতর্ক জেলা প্রশাসন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বেশ কয়েক দিন ধরেই ঘাটাল মহকুমায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম। তবে নিয়ম মেনে লালারস সংগ্রহের কাজ চলছে।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে ঘাটাল মহকুমার দাসপুরেই প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। আক্রান্তের নিরিখে জেলার মধ্যে সবার উপরে ছিল এই মহকুমা। একসময়ে এখানে ৭০টি গণ্ডিবদ্ধ এলাকা ছিল। দৈনিক গড়ে ১০-১২ জনের নমুনা পজ়িটিভ আসছিল। একদিনে সর্বাধিক ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, হাসপাতালে জায়গা না থাকায় আক্রান্তদের লজ ও গেস্ট হাউসে রাখার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। তবে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়। ঘাটাল-দাসপুরে এখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমে হয়েছে গড়ে ১-২ জন। গণ্ডিবদ্ধ এলাকায় সংখ্যাও কমে দাঁড়িয়েছে ১০টিতে। কোনও কোনও দিন পরীক্ষায় পাঠানো সবকটি নমুনাই নেগেটিভ আসছে। বুধবারও রাত ৯টা পর্যন্ত ঘাটাল মহকুমায় নতুন করে কোনও করোনা পজ়িটিভের সন্ধান মেলেনি।
পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে খবর, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২৭ মে অবধি রেকর্ড সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ঘাটাল-দাসপুরে ফিরেছিলেন। তাঁদের অনেকেই দিল্লি-মুম্বই-গুজরাতে থাকতেন। তবে এখন শ্রমিকদের ফেরার সংখ্যা এখন অনেকটাই কম। দৈনিক ২০-২৫ জন করে ফিরছেন। লোক কমছে কোয়রান্টিন সেন্টারগুলিতেও। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘাটাল-দাসপুরে মূলত পরিযায়ী শ্রমিকদের সূত্রেই আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছিল। তাঁরা এখন কম আসছেন। তাই সংক্রমণও অনেকটা কমেছে।’’
তবে একই সঙ্গে কমেছে সচেতনতাও। আক্রান্তের সংখ্যা যখন প্রতিদিন বাড়ছিল তখন এই মহকুমায় মাস্ক পরে বেরোনোর প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। বাজারে সামাজিক দূরত্বও মানছিলেন অনেকে। তবে দিনকয়েক ধরে সেসব প্রায় উধাও। মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছেন, “ঘাটালে আক্রান্ত কমছে। তবে একইসঙ্গে কমছে সচেতনতাও। দূরত্ব বিধি মানা তো দূরের কথা, মাস্কও পরছেন না অনেকে। সরকারি অফিস থেকে বাজার—সব জায়গাতেই এক ছবি। এই পরিস্থিতি চললে সংক্রমণ ফের বাড়তেই পারে।”