প্রতীকী ছবি।
করোনার দাপট ক্রমশ বাড়ছে জেলায়। লকডাউন চলাকালীন হলদিয়া, তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক ও এগরা মিলিয়ে গত ৩১ মে পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০০-র মধ্যে ছিল। কিন্তু লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ভিন্ রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফেরার পরে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
গত একমাসে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় এই মুহূর্তে মোট ৪৪৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। মঙ্গলবারও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে ২ জন ও তমলুক শহরে এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকে খারুই-১ ও শান্তিপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে করোনা আক্রান্ত দু’জনই পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের পাঁশকুড়া বড়মা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তমলুক শহরের পার্বতীপুর (৮ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার ৭৮ বছরের এক বৃদ্ধ অসুস্থ ছিলেন। তিনি তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর লালারস পরীক্ষায় মঙ্গলবার করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসার পরে তাঁকেও পাঁশকুড়া বড়মা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তমলুক শহরের এক নার্সিংহোমে ২৫ জুন ৫৬ বছরের এক ব্যক্তিকে ভর্তির পর ৩০ জুন কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। এরপরেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে মঙ্গলবার তমলুকের ওই নার্সিংহোম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হলদিয়ার নতুন করে করোনা আক্রান্ত ৪। গত ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশ থেকে হলদিয়ায় ফেরেন মা ও মেয়ে। তারা দুর্গাচকের দুর্গাচক বাজারের একটি আবাসনে থাকতেন। দুজনের লালা রস সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সোমবার রাতে তাঁদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। উলুবেড়িয়া থেকে হলদিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি ওই সংস্থার গেস্ট হাউসে ছিলেন। তাঁরও রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। হলদিয়া পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে এক পরিযায়ী শ্রমিক দিল্লি থেকে এসেছিলেন। তাঁকে একটি নিভৃতাবাসে রাখা হয়েছিল। তাঁর রিপোর্টও পজিটিভ।
জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের যে ভাবে বাড়ছে তাতে লকডাউন শিথিল হওয়ার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল ও অবস্থান-বিক্ষোভ সহ লোকজন জমায়েত চলছে প্রায় প্রতিদিনই। এছাড়াও বিভিন্ন পঞ্চায়েত, বিডিও অফিসে আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের অবরোধ-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে লোকজন জমায়েত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচি পালনে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে করোনা সতর্কতা বিধি মেনে চলার শর্ত রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালনে সময় সে দিকে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি নেই বলে অভিযোগ তুলছেন বাসিন্দারা। ফলে সামাজিক দূরত্বের বিধি অগ্রাহ্য করে লোকজনের জমায়েত নিয়ে বাসিন্দাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
লাদাখে চিনা সৈন্যের হাতে নিহত ভাকতীয় জওয়ানদের স্মরণে কয়েকদিন আগে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের নোনাকুড়ি বাজারে বহু মানুষ জমায়েত হয়ে মোমবাতি মিছিল করেন। মিছিলে স্থানীয় তৃণমূলের নেতারা ছিলেন। এ ছাড়া পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে তৃণমূল, বামেদের মিছিলও অব্যাহত। সোমবার নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের রেয়াপাড়া বাজারে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিবস পালন উপলক্ষে মিছিল করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিছিলে সামাজিক দূরত্ব বিধি অগ্রাহ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূল আহ্বায়ক শরৎ মেট্যা মানছেন, ‘‘মিছিলের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবে মিছিলে করোনা সতর্কতা বিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছি।’’ বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘আমপানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে শাসকদলের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করলেও প্রশাসন-পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই আমরা কর্মসূচি করছি। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে আমরা রাস্তায় নামতাম না। প্রশাসনই আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে।’’
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় লোকজন জমায়েত করে কর্মসূচি পালন নিয়ে জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘হলদিয়া, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী, মহিষাদল ও পটাশপুরের কিছু এলাকাকে গণ্ডিবদ্ধ করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে।’’