প্রকাশ্যে: খোলা রাস্তায় এ ভাবেই বিক্রি হচ্ছে চোলাই। নিজস্ব চিত্র
সদর শহর তমলুক থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটারের দূরত্ব। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশেই নোনাকুড়ি বাজার। শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নোনাকুড়ি। অথচ রেগুলেটেড মার্কেটের কাছেই চোলাইয়ের রমরমা। বাঁশের বেড়া আর টিন-ত্রিপলের ছোট ছোট ছাউনি দেওয়া ঠেকে দিনের বেলাতেই মদ্যপদের আড্ডা।
অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। অথচ মুখে কেউ কিছু বলেন না। তাঁদের অভিযোগ, মদ্যপ ও ঠেক মালিকদের দাপটে মুখ খোলার উপায় নেই। নেই পুলিশি নিরাপত্তার আশ্বাসও। আবগারি দফতর সব জেনেও ব্যবস্থা নেয় না বলেও তাঁদের দাবি।
২০০৯ সালে এই নোনাকুড়ি বাজারেই চোলাই খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল স্থানীয় রবি মন্ত্রীর। ৪২ বছরের একমাত্র রোজগেরে মানুষটি তাঁর সংসার ভাসিয়ে দিয়েছিলেন নেশার স্রোতে। তার পর থেকে তাঁর স্ত্রী নিয়তিদেবী ওই বাজারে মাছের দোকান চালান। সেই রোজগারেই বড় হয়েছে তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। নিয়তিদেবী বলেন, ‘‘আমি তো একা নই। মদ শেষ করে দিয়েছে আমার স্বামীর মতো আরও অনেককে। তবু হেলদোল নেই। মানুষগুলো আবার ভিড় করে ওই ঠেকে।’’
সে বছর মে মাসে লোকসভা ভোটের কয়েকদিন আগে নোনাকুড়ি ও রামতারক বাজারের ঠেকে চোলাই খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৫২ জনের। বেশ কয়েকজন মানুষ চিরদিনের মতো হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। ছ’বছরও পেরোয় নি। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে দুর্গাপুজোর ক’দিন আগে ময়না ব্লকের আড়ংকিয়ারানা ও পেটুয়া বাজারে একই ভাবে মৃত্যু হয় ২৫ জনের।
তবু হুঁশ ফেরেনি। কয়েকদিন আগেই পাঁশকুড়ার কেশাপাটে চোলাই ভাটি উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়ে পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করেছিলেন স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। কোলাঘাটের কুমারহাটে চোলাই ভাটি উচ্ছেদ অভিযানও হয়েছে। কিন্তু নোনাকুড়ির পরিবর্তন নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নোনাকুড়ি, রামতারক বাজারের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে মদে ব্যবসা চলে। আবার প্রকাশ্যে ঠেক চালাতেও পিছপা হন না এক শ্রেণির ব্যবসায়ী।
পূর্ব মেদিনীপুরের আবগারি সুপার স্বপন হাজরা অবশ্য দাবি করেছেন পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভাল। তিনি বলেন, ‘‘চণ্ডীপুর ব্লক, নন্দকুমার, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় যে সব চোলাই তৈরির ঠেক ছিল তার বেশিরভাগই বন্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকাতেও চোলাই ঠেকের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে।’’