মন্দারমণিতে সমুদ্রের গা ঘেঁষে চলছে নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র।
বিধি ভেঙে মন্দারমণিতে রমরমিয়ে বেআইনি নির্মাণ চলছে বলে অভিযোগ। শিকেয় উঠেছে ‘কোস্টাল রেগুলেটরি জোন’ (সিআরজেড) আইন।
হাইকোর্টের নির্দেশে সেখানে সম্প্রতি চারটি বেআইনি লজ ভেঙে দিয়েছে দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। তার পর সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই পাশে শুরু হয়ে গিয়েছে নির্মাণ। প্রতি বর্গফুট বেআইনি নির্মাণের জন্য ৬০০ টাকা ‘ঘুষ ' দেওয়ার পর তবেই অলিখিত অনুমোদন মেলে বলে স্থানীয় হোটেল মালিকদের একাংশের দাবি। থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে প্রশাসনের নাকের ডগাতেই হচ্ছে সব কিছু। মন্দারমনির বেআইনি নির্মাণ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন,"নিয়ম না মেনে যা কিছু নির্মাণ করা হচ্ছে, সবকিছু খতিয়ে দেখে ভেঙে ফেলা হবে।"
রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, পুরুষোত্তমপুর, দাদনপাত্রবাড় এবং মন্দারমণিতে বহু জায়গায় সবুজ কাপড় দিয়ে বিশাল এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। এবং তার ভেতরেই চলছে দেওয়াল তৈরি বা ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। একাধিক হোটেলের মালিক বলছেন,"গোটা এলাকায় সিন্ডিকেট চক্র চলছে। বহিরাগত উদ্যোগপতিদের পাশাপাশি স্থানীয়দের অনেকে এই সব নির্মাণ তৈরি করছেন। দু-এক জন ঠিকাদার বিনিয়োগকারী থেকে প্রতি বর্গফুট নির্মাণের জন্য ৬০০ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছেন। আর সেই টাকা পৌঁছে যাচ্ছে প্রশাসনের নানা মহলে।
স্থানীয় হোটেল মালিক সংগঠনের সভাপতি সন্দীপন বিশ্বাসও এই অভিযোগ মানছেন। তবে তার দাবি, "এই সব নির্মাণের জন্য কারা অনুমতি দিয়েছে, তা অজানা।’’ স্থানীয় কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান স্বপন দাস বলছেন, "২০০৮ সালের পর থেকে মন্দারমনি এলাকায় কোনও নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি!"পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলছেন, "জাতীয় পরিবেশ আদালত এবং হাইকোর্ট মন্দারমনিতে সব রকমের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেছে। তা সত্ত্বেও যথেচ্ছ ভাবে নির্মাণ হচ্ছে।"কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল যতদূর আছড়ে পড়ে, তার কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনও নির্মাণকাজ করা যাবে না। অথচ, সেই বিধি না মেনেই মন্দারমণিতে একের পর এক নির্মাণ মাথা তুলেছে বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে রামনগর-২ এর বিডিও-র প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, "আদালতের নির্দেশ মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।" দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানসকুমার মণ্ডলের অবশ্য বক্তব্য, "মন্দারমণিতে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা ছিল না। খোঁজ নিচ্ছি।"