হোটেল খুললেও খোলেনি দোকানপাট। বৃহস্পতিবার সুনসান ছিল দিঘা। নিজস্ব চিত্র
কয়েকদিন আগেই হোটেল খোলা হলেও, স্থানীয়দের আপত্তিতে পর্যটকদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে মন্দারমণি থেকে। ‘আনলক-ওয়ান’ পর্ব শুরু হয়ে যাওয়ার পর এ বার খুলল সৈকত শহর দিঘাও।
বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটকদের জন্য দিঘায় খুলে দেওয়া হল হোটেল। এ দিন থেকে অনলাইনে এবং ফোনের মাধ্যমে হোটেলে ঘর বুকিং ও চালু হয়ে গেল। এ দিন বিকেল পর্যন্ত কলকাতা থেকে এক দম্পতি দিঘায় বেড়াতে গিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেলেও হোটেলে বুকিংয়ের খবর নেই বলে দাবি দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের।
গত বুধবার সন্ধ্যায় দিঘায় হোটেল মালিক সংগঠনের কার্যালয়ে পরিচালকমণ্ডলীর কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। সেখানে ওল্ড ও নিউ দিঘায় সৈককের ধার বরাবর যে সব হোটেল রয়েছে আপাতত সেই সব হোটেল খোলা হবে স্থির করেন মালিকপক্ষ। সেই সঙ্গে জনবসতি রয়েছে এমন এলাকায় কোনওভাবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত হোটেল খোলা যাবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা মেনে দিঘায় সমুদ্র তীরবর্তী এবং শহর এলাকার হোটেলগুলির ৩০ শতাংশ পর্যটকদের রাখা যাবে এবং ৩০ শতাংশ কর্মচারী দিয়ে ওই হোটেলগুলিকে পরিচালনা করতে হবে বলেও সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে। পর্যটকদের সামনে হোটেলের ঘর জীবাণুমুক্ত করতে হবে বলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এদিকে দিঘায় বেড়াতে আসা সমস্ত পর্যটকের সুরক্ষায় জীবাণুনাশক টানেল তৈরি করতে বলা হয়েছে হোটেল মালিকদের। জুলাই মাস থেকে ওই পদ্ধতি চালু করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হোটেল মালিকেরা। আপাতত জেলা প্রশাসনের তরফে দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমস্ত জিনিসপত্র ও হোটেলের ঘর নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা, সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলা ও মুখে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তবে আগের মতো সৈকতে অবাধে ঘুরে বেড়ানো যাবে না বলে নিয়ম বলবৎ করতে চাইছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রসঙ্গত, ওল্ড এবং নিউ দিঘা মিলিয়ে ছ’শোর মতো হোটেল রয়েছে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে লকডাউন শুরুর পর থেকেই এই সব হোটেল বন্ধ হয়ে যায়।
দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সুজন দত্ত বলেন, ‘‘গত ৮ জুন থেকে সরকারিভাবে পর্যটন শিল্প চালু রাখার কথা বলা হয়েছিল। তাই আপাতত হোটেল খোলার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না। তবে পর্যটক এবং হোটেলের কর্মীদের সর্বক্ষণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’’ হোটেল খোলার পর এ বার দর্শনীয় স্থানগুলিও খোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে ডিএসডিএ সূত্রে জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে অমরাবতী পার্ক খোলা হবে বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও দিঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র, মেরিন অ্যাকোরিয়াম দ্রুত খোলার চেষ্টা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর।
দিঘা -শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সমুদ্র তীরবর্তী এবং শহর এলাকার ৩০ শতাংশ হোটেল খোলা রাখা হচ্ছে। ধাপে ধাপে গ্রামাঞ্চল এলাকাতেও হোটেল খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত পর্যটকদের জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করা, নিয়মিত দেহের তাপ মাপা এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার জন্য হোটেল মালিকদের নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।’’
এদিকে বৃহস্পতিবার হোটেল খোলার খবর পেয়ে গাড়িতে দিঘায় যাচ্ছিলেন কলকাতার একদল পর্যটক। হেঁড়িয়ার কাছে একটি গরুকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১১৬ বি জাতীয় সড়কের ধারে নয়ানজুলিতে উল্টে যায় তাঁদের গাড়ি। ভিতরে আটকে পড়ে ছ’ জন পর্যটক। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। গাড়িটি আটক করেছে পুলিশ।