বন্ধের দিন তমলুক বাসস্ট্যান্ড। বুধবার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটে কার্যত থমকে গেল খোদ পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর জেলার পরিবহণ।
বুধবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন জাতীয় ও রাজ্য সড়কে অবরোধে নামে বাম-কংগ্রেস-এসইউসি’র সমর্থকেরা। তাতে জেলার সরকারি-বেসরকারি বাস চলাচল থেকে অন্য পরিবহণে প্রভাব পড়ে। হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় ও রাজ্য সড়কে ভোর থেকেই সরকারি এবং বেসরকারি বাস চলাচল শুরু হয়েছিল এ দিন। কিন্তু বেলা বাড়ার পরে মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, তমলুকের নিমতৌড়ি, রামতারকহাট, রাধামণি বাজার ও মানিকতলা-সহ বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ শুরু হয়। তার পরে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি বাস পরিবহণ। সকাল ১১ টায় তমলুক শহরে জেলা প্রশাসনিক অফিসের সামনে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করে।
সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত পাঁশকুড়ার পশ্চিম ন্যাকড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের দুটি লেনেই টায়ার জ্বালিয়ে চলে অবরোধ। তাতে নেতৃত্ব দেন সিপিএম বিধায়ক ইব্রাহিম আলি। পাঁশকুড়ার সিদ্ধা, রাতুলিয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কেও চলে অবরোধ। তাতে দু’ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জাতীয় সড়ক। পুলিশ হঠিয়ে দিলেও দফায় দফায় অবরোধ হয়েছে এগরা ত্রিকোণ পার্কে। সেখানে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে এসইউসিকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একই ভাবে কুদি-ভবানীচক এবং দোবাঁধিতে পথ অবরোধ করেন বাম কর্মীরা। পটাশপুরের বাঙ্গুচক মোড়, প্রতাপদিঘির মংলামাড়ে মিছিলও হয়।
এ দিন রাস্তায় মাঝে মধ্যে সরকারি বাসের দেখা মিললেও বেসরকারি বাসের তেমন দেখা মেলেনি। গোলমালের আশঙ্কায় পাঁশকুড়া ও মেচেদা বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনও বেসরকারি বাস ছাড়েনি। দিঘা এবং কাঁথিতে সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ডে বেসরকারি বাস পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এর ফলে হেঁড়িয়া, নাচিন্দা, কাঁথি এবং রামনগরের মত বড় বাস স্টপেজগুলিতে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।
বাস মালিকদের সংগঠন জেলা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মহম্মদ শামসের আরেফিন বলেন, ‘‘ভোরে মেচেদা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে হলদিয়া, তমলুক ও কাঁথি-সহ বিভিন্ন রুটের বাস বের হয়েছিল। কিন্তু সকাল ৫টার পর থেকে বাসস্ট্যান্ডের প্রবেশপথে অবরোধ হয়। এর ফলে জেলার বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল ব্যাহত হয়।
এ দিন জেলার মোট এক হাজার ২০০টি বেসরকারি বাসের মধ্যে ১০০টি মতো চলেছে।’’ বাস না চলায় সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া হাঁকিয়েছেন টোট চালকেরা। এ দিন তমলুকের হাসপাতাল মোড় থেকে মেচেদা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার টোটো যেতে ৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের।
বাসের পাশাপাশি অবরোধ হয়েছে নন্দকুমারের টিকারামপুর গ্রামে তমলুক-দিঘা রেললাইনে। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ওই লাইনে হাওড়াগামী লোকাল ট্রেন আটকে যায়। দিঘা থেকে পাঁশকুড়াগামী ট্রেনেরও চলাচলে বিঘ্ন হয়। এক ঘণ্টা পরে ওই অবরোধ ওঠে। কোলাঘাটের ভোগপুর স্টেশনে রেল অবরোধও হয়েছে।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘বাসের কর্মীরা সমর্থন করায় জেলার প্রায় সমস্ত বাস চলাচল বন্ধ ছিল। কিছু সরকারি বাস চালানো হলেও তাতে যাত্রী ছিলেন না। ধর্মঘটে ব্যপক প্রভাব পড়েছে।’’