জল ভেঙেই টিকা দিতে যাচ্ছেন আশা কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
বন্যায় বিপর্যয়ের সঙ্গে থমকে গিয়েছিল করোনার টিকাকরণ। দেড়মাস পর এখনও জলমগ্ন বেশ কিছু গ্রাম। হাঁটুজল পেরিয়েই বয়স্কদের কাছে পৌঁছলেন কৃষ্ণা ও শ্যামলীদের মতো স্বাস্থ্যকর্মীরা। দিলেন করোনার টিকা। উৎসাহ দিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ছিলেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভদীপ বাগ।
একশো শতাংশ মানুষকে করোনার টিকা দিতে হবে। নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রের। নির্দেশ রয়েছে রাজ্যেরও। কিন্তু পটাশপুরের প্লাবিত এলাকায় সেই কাজ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে ব্লক প্রশাসনকে। তবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতেই এলাকায় মাইকে প্রচার করে স্থানীয় টিকাকরণ শিবিরগুলিতে অধিকাংশ মানুষের করোনা টিকাকরণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জলবন্দি এলাকার বয়স্ক ও বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষেরা শিবিরে পৌঁছতে না পারায় টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। গত শুক্রবার থেকে তিনদিন বিশেষ কর্মসূচি নেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। ব্লকের ২৭টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনএম ও আশাকর্মীদের নিয়ে টিম গঠিত হয়। তিনদিনে বিশেষ কর্মসূচিতে বাড়িতে গিয়ে বয়স্ক ও বিশেষভাবে সক্ষম মোট আড়াই হাজার মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া হয়।
চিস্তিপুর-২ ও বাড়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্লাবিত এলাকায়। সেখানে হাঁটু সমান জল পেরিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বয়স্কদের টিকাকরণ সুনিশ্চিত করেছেন। হাটু জলে কাঁধে করোনা ভ্যাকসিনের ভায়াল নিয়ে ক্লান্তিহীন ভাবে হাঁটতে দেখা গিয়েছে দুই স্বাস্থ্যকর্মী কৃষ্ণা মাইতি দিন্ডা ও শ্যামলী মাইতি ভুঁইয়াকে। সকলকে বুঝিয়ে টিকা দেওয়া। কোথাও বাধা জল। কোথাও আবার কাদা। কৃষ্ণা ও শ্যামলী বলেন, ‘‘মানুষের সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। মানুষ সুস্থ থাকলে আমরা মানসিক ভাবে সুস্থ থাকি। তাই শত বাধা থাকলেও আমাদের মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে হয়। সাময়িক ক্লান্তি থাকলেও দিনের শেষে স্বস্তি মেলে।’’ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভদীপের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীদের জেদেই এই দুর্গম পথ অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে সমস্ত বাধা পেরিয়ে একশো শতাংশ মানুষকে আমরা করোনা টিকাকরণে সুনিশ্চিত করব।’’
পটাশপুর-১ ব্লকে মোট ১ লক্ষ আটত্রিশ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বসবাস করেন। এখনও পর্যন্ত প্রথম ডোজ় করোনা টিকা পেয়েছেন ১ লক্ষ সাড়ে সতেরো হাজার মানুষ। দ্বিতীয় করোনা ডোজ় টিকা পেয়েছেন ৩৩ হাজার সাতশো জন। শতাংশের হিসেবে পটাশপুর-১ ব্লকে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ করোনা টিকাকরণের আওতাভুক্ত। বাকি সতেরো হাজার মানুষকে দ্রুত টিকাকরণের লক্ষ্যে নামছে স্বাস্থ্য দফতর।