মৃত কোণ্ডালা রাও। নিজস্ব চিত্র
মাস দু’য়েক আগে বিয়ে হয়েছিল। তার পরে দিন পনেরো বাড়িতে কাটিয়ে ফিরেছিলেন আইআইটিতে। এর পরে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় আর বাড়ি যেতে পারেননি। খড়্গপুর আইআইটি-র ওই গবেষক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ মিলল হস্টেলের বন্ধ ঘরে।
সোমবার আইআইটি-র বি আর অম্বেডকর হলের (হস্টেল) ডি ২৪৫ নম্বর ঘর থেকে উদ্ধার হয় ভবানীভাটলা কোণ্ডালা রাও (৩০) নামে ওই ছাত্রের দেহ। মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই গবেষক ছাত্রের বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগরের দক্ষিণ ঘান্টু স্ট্রিটে। এ দিন বাড়ির লোকেরা তাঁকে ফোনে না পেয়ে সহপাঠীদের ফোন করেন। সহপাঠীরা ডাকাডাকি করে সাড়া পাননি। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে হস্টেলের ঘরে ঢুকে দেখে, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ির ফাঁসে ঝুলছে কোণ্ডালার দেহ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে ওই গবেষক পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু কারণ কিছু বোঝা যাচ্ছে না।”
লকডাউনের আগেই করোনার জেরে আইআইটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় অনেক পড়ুয়া বাড়ি চলে গিয়েছে। হস্টেলগুলি কার্যত ফাঁকা। হাতে গোনা কয়েকজনই আছে। তার মধ্যে এমন ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। তবে এ নিয়ে কিছুই বলতে চাননি তাঁর বিভাগের অন্য গবেষক পড়ুয়ারা। ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরেও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষক সাগর সরকার বলেন, “আমি এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোণ্ডালার এক সহপাঠী বলেন, “ও খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। ওর গবেষণা প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। লকডাউনে কড়াকড়ি থাকায় খুব বেশি দেখা হচ্ছিল না। কী ভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক ধরেই আইআইটিতে ছিলেন কোণ্ডালা। গত ১৪ফেব্রুয়ারি তাঁর বিয়ে হয় অন্ধ্রপ্রদেশেই। তারপর ২৮ফেব্রুয়ারি আইআইটিতে ফিরে আসেন তিনি। স্ত্রী বি ভগবতীও চেন্নাইতে নিজের কর্মস্থলে চলে যান। মার্চের শেষে চেন্নাইতে যাওয়ার কথা ছিল কোণ্ডালার। লকডাউনে তা আর হয়নি। মৃতের জামাইবাবু নরসিংহ মূর্তি এ দিন ফোনে বলেন, “ঠিক হয়েছিল গত ১৪এপ্রিল লকডাউন উঠে গেলে ও আসবে। কিন্তু সেটাও হয়নি।”
তবে কি বাড়ি যেতে না পারার অবসাদেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এই ছাত্র? কোণ্ডালার দিদি জে রূপা কাত্যায়নী বলেন, “রবিবার আমার বিবাহবার্ষিকী ছিল বলে শনিবার রাতেই ভিডিয়ো কলে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। মায়ের সঙ্গেও কথা বলেছিল। অস্বাভাবিক কিছু বোঝা যায়নি।” আইআইটির রেজিষ্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহের মতে, “পড়াশোনায় ওই ছাত্রের সমস্যা ছিল না। লকডাউনও কারণ নয় বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, কেউ বাড়ি যেতে চাইলে আমরা অনুমতি দিয়ে তাঁকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। ওই ছাত্র এমন কোনও আবেদন করেনি। গোটা বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।”