পুলিশের সঙ্গে বচসায় সায়ন্তন বসু ও লকেট চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
হলদিয়ায় জোড়া মহিলা খুনের ঘটনায় জড়িতদের কঠিনতম শাস্তির দাবি তুললেন। সেই সঙ্গে রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তায় শাসক দলের ব্যর্থতা তুলে ধরে আত্মরক্ষায় মহিলাদের হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বললেন বিজেপি মহিলা মোর্চা রাজ্য সভানেত্রী তথা সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
হলদিয়ায় মা ও মেয়েকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার তমলুকে জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপির তমলুক জেলা মহিলা মোর্চা। এদিন দুপুরে মানিকতলায় দলের মহিলা সমর্থকরা জমায়েত হয়। সেখান থেকে লকেট ও সায়ন্তনের নেতৃত্বে মিছিল করে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্যসড়ক ধরে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে যায় বিজেপি সমর্থকরা। গোলমাল এড়াতে মানিকতলা মোড় থেকেই পুলিশ সুপারের অফিস পর্যন্ত তিন জায়গায় বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। অ্যান্টি রায়ট স্কোয়াড ও জল কামান রাখা হয়েছিল। তবে পুলিশের বাধা ছাড়াই বিজেপির মিছিল পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে পৌঁছে যায়। সেখানেই গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন লকেট, সায়ন্তন।
হলদিয়ায় দুই মহিলা খুনের উল্লেখ করে লকেট বলেন, ‘‘মা এবং মেয়েকে জ্বালিয়ে নদীর ধারে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের যে খুন করেছে তার ছবি আমরা দেখেছি এখানকার মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। ভোটের সময় সে ইভিএম লুঠ করতে গিয়েছিল। সে যাতে ধরা না পড়ে, যাতে শাস্তি না পায় সে জন্য ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল।’’ ফের তিনি বলেন, ‘‘এখন দেখা যাচ্ছে মা ও মেয়েকে নোংরা, বাজে, নষ্ট এই ধরনের কথা বলে পুরো মামলা ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যতই খারাপ হোক, যতই যা কিছু করুক। একজন মা ও মেয়েকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেওয়া কি গ্রহণযোগ্য। মহিলাদের উপর এধরনের অত্যাচার আগে মালদহ, বালুরঘাট, ভাটপাড়া, জলপাইগুড়ি, বীরভূমে দেখেছি। আজ তমলুকে দেখছি। কাউকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে। অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে মহিলাদের।’’
এরপরে মহিলাদের উপরে এ ধরনের অত্যাচারের প্রতিবাদে সব মহিলাদের রাস্তায় নামতে বলেন তিনি। হলদিয়ার ঘটনায় তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিলকে কটাক্ষ করে লকেট বলেন, ‘‘তৃণমূলের মতো প্রতিবাদের নাটক নয়। ওই সব আমরা অনেক দেখছি। সে জন্য আপনাদের বলছি আগামী দিন প্রতিবাদের জন্য রাস্তায় মেয়েরা আগে নামবেন। দরকার হলে মেয়েরা হাতে অস্ত্র তুলে নেবেন। প্রশাসন যখন কাজ করছে না তখন নিজেদের সুরক্ষিত করতে মহিলাদেরকেই অস্ত্র হাতে নিতে হবে। আজ সময় এসে গিয়েছে।’’
লকেটের এ হেন মন্তব্য নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘এরকম উগ্র কথাবার্তা বলা নিয়ে দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। আমরা এতে গুরুত্ব দিচ্ছি না। পুলিশ বিষয়টি দেখছে। যারা ওই বক্তব্য শুনেছেন তাঁরা পুলিশে অভিযোগ করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।’’
এদিন শুভেন্দু অধিকারীদের নাম না করে দলীয় সমর্থকদের প্রতি লকেটের সতর্কবার্তা, ‘‘২০২১-এর বিধানসভা ভোটে জিতে রাজ্যে বিজেপি আসছে। অধিকারী অ্যান্ড ব্রাদার্স তখন কোন দিকে যাবে সেটা কেউ জানে না। ওদের ফাঁদে পা দেবেন না।’’
হলদিয়ার ঘটনার প্রসঙ্গে সায়ন্তন বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে এই ব্যক্তি ইভিএম লুট করতে গিয়েছিল। সিআরপির হাতে ধরা পড়েছিল। পুলিশ একে ছেড়ে দিয়েছিল এখানকার মন্ত্রীর কথায়। আমরা দাবি করছি ওই মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। যতক্ষন না তিনি পদত্যাগ করবেন ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।’’