শিল্পকর্মে ব্যস্ত শিল্পী গৌরমোহন পাহাড়ি। — নিজস্ব চিত্র।
দেড় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব এই বাংলার পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থেকে রাজধানী নয়াদিল্লির। কিন্তু সেই দূরত্ব মুছে দিতে চলেছেন মহিষাদলের শিল্পী গৌরমোহন পাহাড়ি। সেজে উঠছে নতুন সংসদ ভবন। তার দেওয়ালে স্থান পেতে চলেছে অজন্তা-ইলোরার ধাঁচে তৈরি গৌরমোহনের ফ্রেস্কো, ম্যুরাল পেন্টিং।
খড়্গপুর আইআইটি’র আর্কিটেক্ট কমিউনিকেশনের প্রাক্তন শিক্ষক গৌরমোহন। তাঁর হাতেই তৈরি কলকাতার টাউন হল মিউজিয়াম এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের সংগ্রহশালা। গৌরমোহনের কৃতিত্ব দেখে তাঁকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রক। তাই নতুন সংসদ ভবনেও অমলিন হয়ে থাকতে চলেছে বাংলা এবং বাঙালির ছোঁয়া।
বাঙালি শিল্পী নন্দলাল বসুর আঁকা ২২টি ছবিই এ বার সংবিধানের পাতা থেকে উঠে আসছে নতুন সংসদ ভবনের দেওয়ালে। রাম-লক্ষ্মণ-সীতা, হনুমান, বুদ্ধদেব, মহাবীর, শিবাজি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি এবং নানা নকশায় সেজে উঠবে সংসদ ভবনের দেওয়াল। এ ছাড়াও ত্রিকোণাকৃতি নতুন সংসদ ভবনে সাধারণের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট ৩ দরজাতেও থাকছে গৌরমোহনের শিল্পকলা। ওই দরজাগুলির নাম হতে চলেছে জ্ঞান, কর্ম এবং শক্তি দ্বার। প্রথম দ্বারটির দু’পাশে থাকবে জ্ঞানের প্রতীক গার্গী এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি। কর্ম দ্বারে সর্দার পটেল এবং বি আর অম্বেডকরের ছবি। শক্তি দ্বারে ফুটিয়ে তোলা হবে চাণক্য এবং গান্ধীজির লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের দৃশ্য।
— নিজস্ব চিত্র।
এই কাজের জন্য কলকাতার কুমোরটুলি থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রায় ৮০ কিলোগ্রাম খড়ি, এলা মাটি, গেরি মাটির মতো ‘আর্থ কালার’। সঙ্গে তেঁতুল বীজের গুঁড়ো থেকে তৈরি আঠা। প্রায় ৪০০ কিলোগ্রাম মিহি দানার বালিও তোলা হয়েছে রূপনারায়ণ নদ থেকে। এ ছাড়াও আনা হয়েছে প্রায় ৭০ কিলোগ্রাম ঝিনুকের গুঁড়ো থেকে তৈরি চুনও।
মহিষাদলের রাজ হাইস্কুলে পড়াশোনা শিল্পী গৌরমোহনের। এর পর কলকাতার আর্ট কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি। বর্তমানে দিল্লিতেই থাকেন তিনি। নয়ডায় তাঁর নিজের স্টুডিয়োয় এখন জোরকদমে চলছে ‘সংবিধান গ্যালারি’র দেওয়ালের জন্য ফ্রেসকোর কাজ। দিনরাত তাতে মজে রয়েছেন গৌরমোহন এবং তাঁর সহকারী নীলকমল আদক, দাউদ ইকবালরা।
দিল্লি থেকে গৌরমোহন ফোনে বলেন, ‘‘ওয়ার্কশপ থেকে তাড়াতাড়িই শিল্পকর্মগুলি ধাপে ধাপে নতুন সংসদ ভবনে আনা হবে। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাকে কাজ শেষ করতে হচ্ছে। মন্ত্রকের তরফ থেকে দেশজোড়া শিল্পী ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে থেকে কাজের জন্য শিল্পী নির্বাচন করে তাঁদের হাতে কাজ তুলে দিয়েছে। এর পর আমার হাতে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের শেষের মধ্যেই কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।’’ গৌরমোহন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই কাজের জন্য গোটা দেশের শিল্পীদের হাজির করেছেন।