নদীতে ক্রেন শুধু সদরেই

নদী, পুকুরে বিসর্জনে বাড়ছে দূষণ। সচেতনতা সীমিত সামান্য অংশেই। ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটাল শহরে প্রতিমা বিসর্জন মূলত শিলাবতী নদীতেই হয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০০
Share:

ভাসানের পরে শিলাবতী নদীর পাড়ে স্তূপাকার আবর্জনা। ছবি: কৌশিক সাঁঁতরা

বিসর্জনের পরে নদীর জলেই পচে খড়, ফুল, পুজোর অন্য উপকরণ। ছড়ায় দূষণ।

Advertisement

শারদোৎসবের মরসুমে ছবিটা চেনা। দুর্গাপ্রতিমার নিরঞ্জন দিয়েই শুরু হয়। তারপর একে একে লক্ষ্মী, কালী, জগদ্ধাত্রী। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী, শিলাবতী, সুবর্ণরেখা। নদীগুলির বিভিন্ন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়। সব থেকে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয় মেদিনীপুরে কংসাবতীর গাঁধী ঘাটে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, দূষণ রোধে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়। ক্রেনের সাহায্যে প্রতিমা জলে ফেলা হয়। পরে কাঠামো জল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। মহকুমাশাসক (সদর) তথা পুরসভার চেয়ারপার্সন দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, ‘‘নদীর জল যাতে দূষিত না হয় সে জন্য যে পদক্ষেপ করার আমরা করি। এ বারও করেছি। বিসর্জনে ক্রেন ব্যবহৃত হয়েছে। ক্রেনে প্রতিমা বেঁধে জলে ফেলা হয়েছে। পরে পরেই কাঠামো জল থেকে তুলে ফেলা হয়েছে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, জলে ফেলা ফুল, বেলপাতাও দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নদী সাফাইয়ে নৌকাও ব্যবহৃত হয়েছে।

ঘাটালের শিলাবতীতে অবশ্য ছবিটা আলাদা। নদীর দূষণ নিয়ে সারা বছরই ঘাটাল পুরসভা ও প্রশাসনের কোনও হেলদোল থাকে না। দুর্গাপ্রতিমার বিসর্জনের পরে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। জলে ভাসছে প্রতিমার কাঠামো, সাজের নানা উপকরণ, কাপড় ,প্লাস্টিক। অথচ পুরসভা বা পুজো উদ্যোক্তা, নদী সাফাইয়ে কারও তেমন উদ্যোগী নয়।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘাটাল শহরে প্রতিমা বিসর্জন মূলত শিলাবতী নদীতেই হয়। শহরের মোট ৩৬টি পুজো হয়। এর মধ্যে ৩০টি প্রতিমারই বিসর্জন হয় শিলাবতীতে। শিলাবতী নদীতে শহরের স্কুলঘাট, বেলতলার ঘাট, বাংলো ঘাট, গঙ্গাতলা ঘাটে বিসর্জন চলে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর বিসর্জনের দু’দিন পরে নদীর জলে ভাসছে প্রতিমার সাজের উপকরণ থেকে অস্ত্রশস্ত্র। ঘাটালের বাসিন্দা ও পরিবেশ প্রেমীদের প্রশ্ন, নদীর জলে প্রতিমা বিসর্জনের বিকল্প যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন জল দূষণ রুখতে কেন আগাম তৎপর হচ্ছে না কেউ! কেনই বা দু’দিন পরেও নদীর জল থেকে কাঠামো ও অন্যান্য উপকরণ তোলা হচ্ছে না।

পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষের অবশ্য দাবি, “বিসর্জনের পরে পুরসভার কর্মী নামিয়ে কাঠামো তুলে নেওয়া হয়। এ বারও হয়েছে। এখনও কাঠামো তোলার কাজ চলছে।”

দিনে দিনে কংসাবতীর নাব্যতা কমেছে। একই পরিস্থিতি শিলাবতী, সুবর্ণরেখারও। এক সময়ে নদীগুলিতে স্রোত থাকত। জোয়ার-ভাটা খেলত। এখন অবশ্য তেমন স্রোত থাকে না। বিসর্জনের দূষণে নদীর গতি আরও রুদ্ধ হয়। ঝাড়গ্রামের দিকে অবশ্য নদীতে তেমন বিসর্জন হয় না। ইতিউতি হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিমাই নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন হয় পুকুরে। আর মেদিনীপুরে উল্টো ছবি। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী। বেশিরভাগ প্রতিমা কংসাবতীর ঘাটেই বিসর্জন দেওয়া হয়। এক সময়ে নদীতে দীর্ঘ দিন ধরে কাঠামো পড়ে থাকত। পড়ে থাকা খড়, ফুল, পুজোর অন্য উপকরণ পচে গিয়ে দূষণ ছড়াত। এখন অবশ্য বিসর্জনের পরপরই নদী সাফাইয়ে পদক্ষেপ করা হয়। এক পুরকর্মী মানছেন, ‘‘আগে এত তাড়াতাড়ি নদী সাফাই হত না। বিসর্জনের দিন কয়েক পরে জল থেকে কাঠামো তোলা হত। ততদিনে প্রতিমার রং জলে মিশে যা দূষণ হওয়ার হয়ে যেত। সেই আশঙ্কা নেই।’’

তথ্য: বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, কিংশুক গুপ্ত

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement