Madhyamik Examination 2024

হাতি-পথে নজর, চিন্তা কুয়াশায়   

এ বছর পরিবহণ দফতর গাড়ি দিলেও বন দফতরের কোনও ‘এসকর্ট’ বা গার্ড সেই গাড়ির সঙ্গে থাকছে না বলেই খবর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১৪
Share:

দুপুর আড়াইটেতেও কুয়াশা। ঝাড়গ্রাম থেকে মেদিনীপুর যাওয়ার রাস্তায় বৈতা এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।

শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশা। আছে হাতির উপদ্রব। তার মধ্যেই সময় বদলে মাধ্যমিক এবার শুরু সকাল পৌনে ১০টায়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, প্রশাসনের আধিকারিক থেকে শুরু করে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হওয়ার আশ্বাস দিলেও আশঙ্কা থাকছেই।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় অনেক জঙ্গলেই হাতি ঘোরাফেরা করছে। গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে দলছুট একটি দাঁতালের হানায় জলপাইগুড়িতে মৃত্যু হয়েছিল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর। এবার তাই আগেভাগেই সতর্ক প্রশাসন। বনাঞ্চলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকছে বলে বুধবার আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে, ভাল করে পরীক্ষা দিক। বনাঞ্চলে যেহেতু হাতির তাণ্ডব থাকে, বনকর্মীরা পরীক্ষার্থীদের বনাঞ্চল থেকে নিয়ে গিয়ে বাসে করে পরীক্ষা হলে পৌঁছে দেবে।

এ বছর পরিবহণ দফতর গাড়ি দিলেও বন দফতরের কোনও ‘এসকর্ট’ বা গার্ড সেই গাড়ির সঙ্গে থাকছে না বলেই খবর। তবে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথে সমস্যা দেখা দিলে তা বন দফতর সামাল দেবে বলেই জানান আধিকারিকেরা। জঙ্গল রাস্তায় বনকর্মীরা গাড়ি নিয়ে থাকবেন। থাকবে হাতি তাড়ানো ঐরাবত গাড়িও। হাতি থাকা জঙ্গল সংলগ্ন প্রত্যন্ত এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বন দফতর থেকে অতিরিক্ত গাড়ির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে কোথাও কোথাও।

Advertisement

গড়বেতা, গোয়ালতোড়, শালবনি এলাকাতেও কয়েকটি জঙ্গলে দলছুট হাতি রয়েছে। রূপনারায়ণ ডিভিশনের ডিএফও শিবানন্দ রাম বলেন, "বনকর্মীদের নিয়ে ছোট ছোট দল করে দায়িত্ব ভাগ করা হচ্ছে। হাতি থাকা জঙ্গলপথে ড্রপ গেট করা হবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য জঙ্গলের পথ ছেড়ে বিকল্প পথ দেখা হচ্ছে। হাতি থাকা জঙ্গল এলাকার পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁঁছানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।" খড়্গপুর ডিভিশনের ডিএফও মনীষকুমার যাদব জানান, ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম, চাঁদাবিলা, কেশররেখা, কলাইকুণ্ডা রেঞ্জ এলাকায় ৩২টি হাতি রয়েছে। এই ৪টি রেঞ্জের জঙ্গল লাগোয়া ৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সময় এগিয়ে আসায় প্রধান পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রশ্নপত্র নিতে থানায় কমবেশি ভোর ৬টার মধ্যে পৌঁছতে হবে। প্রধান পরীক্ষা কেন্দ্রের অধীনস্থ কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্নপত্র পৌঁছতে হবে ৮টার মধ্যে। সাড়ে ৮টা থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের গেট খুলে দেওয়া হবে। এখন দুই জেলাতেই ভোর থেকে বেলা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে। ঘন কুয়াশায় বাস-ট্রেন বাতিল বা বিলম্ব হলে সঠিক সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁঁছানোর চিন্তা থাকছে পরীক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

ঘাটাল মহকুমায় মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন সকালের দিকে মাটি-গাড়ি, পণ্য বোঝাই লরি রাস্তা অবরুদ্ধ করতে না পারে, তার জন্য পরিবহণ দফতর থেকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিবহণ আধিকারিক সন্দীপ সাহার আশ্বাস, "বাস চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকবে। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা হবে না।" পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি জানাচ্ছেন, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য বাস ভাড়া লাগবে না।

ঝাড়গ্রাম জেলায় বিভিন্ন জঙ্গলে মঙ্গলবার সব মিলিয়ে প্রায় ৭৯ হাতি ছিল। এর মধ্যে ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের পাঁচটি রেঞ্জে (ঝাড়গ্রাম, লোধাশুলি, মানিকপাড়া, জামবনি ও গিধনি) রয়েছে ২৭টি হাতি। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইল ব্লকের বনাঞ্চলগুলি খড়্গপুর বনবিভাগের অধীনে। জেলার লালগড় এলাকাটি মেদিনীপুর বনবিভাগের অধীনে। লালগড় রেঞ্জে রয়েছে ২০টি হাতি। সেখানে দু’টি পরীক্ষাকেন্দ্রকে চিহ্নিত করে জঙ্গলপথে পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠু যাতাযাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালগড়ের রেঞ্জ অফিসার লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো। এডিএফও (ঝাড়গ্রাম) পার্থ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার রাতে হাতির অবস্থান দেখে বিভিন্ন জঙ্গলপথে ড্রপ গেট লাগানো হবে। জঙ্গলপথে বন দফতরের টহলদার গাড়ি ও ঐরাবত গাড়ি থাকবে। যে জঙ্গলপথে হাতি রয়েছে, সেই রাস্তার পরিবর্তে বিকল্প রাস্তা দিয়ে যাতে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নয়াগ্রাম বাণী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বিকাশকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘জঙ্গল লাগোয়া এলাকার পরীক্ষার্থীদের সতর্কভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement