নজরবন্দি খড়্গপুর হাসপাতাল

সকালে অর্ধেক পাঁউরুটি, রাতে কাঁচা রুটি

সকালে অর্ধেক পাঁউরুটির সঙ্গে জলের মতো দুধ। দুপুরে ছোট মাছ ও পাকা পটলের তরকারি। আর রাতে কাঁচা রুটি। দু’দিন আগেই জেলায় এসে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৬
Share:

নিজস্ব চিত্র।

সকালে অর্ধেক পাঁউরুটির সঙ্গে জলের মতো দুধ। দুপুরে ছোট মাছ ও পাকা পটলের তরকারি। আর রাতে কাঁচা রুটি।

Advertisement

দু’দিন আগেই জেলায় এসে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের মেনুতে ভোলবদল হলেও পাশের মহকুমা খড়্গপুরের হাসপাতালে কিন্তু সেই নিম্নমানের খাবার দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে কিছুটা শ্রী ফিরলেও পরিমাণ কম খাবার এবং তরিতরকারির গুণমান নিয়ে অভিযোগ উঠছে।

অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি দলের খাবারের মান পরীক্ষা করার কথা। তা অবশ্য নিয়মিত হয় না বলেই অভিযোগ। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের ঘটনার পরে নিয়মিত নজরদারি চালানোর জন্য শনিবার সকালে ফের খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ এসে পৌঁছেছে। তারপর কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ দিনই হাসপাতালের হেঁশেলে ঢুঁ মেরে এসেছেন সুপার। তারপরেও অবশ্য খাবার নিয়ে রোগীদের অভাব-অভিযোগে দাঁড়ি পড়েনি।

Advertisement

নিয়মমতো এই হাসপাতালেও সারা দিনে তিনবেলা খাবার পান রোগীরা। ডায়েট চার্ট মেনে সকালে পাঁউরুটি-কলা-ডিম-দুধ, দুপুরে ভাত-ডাল-সব্জি-মাছ আর রাতে ভাত অথবা রুটি, সঙ্গে ডাল-সব্জি-ডিম দেওয়া হয়। কিন্তু রোগী ও তাদের পরিজনেদের বক্তব্য, খাবার কোনও রকমে মুখে তোলা যায়। তবে হামেশাই সকালে অর্ধেক পাউরুটি, নিম্নমানের দুধ, পরিমাণে কম ভাত, মাছের ছোট পিস, না সেঁকা রুটি দেওয়া হয়। প্রায় একমাস হাসপাতালে ভর্তি খড়্গপুরের গেটবাজারের এক খাবারের দোকানের কর্মী সুভাষচন্দ্র ভর্মা বলছিলেন, ‘‘বাধ্য হয়ে সকালে অর্ধেক পাঁউরুটি আর জল মেশানো দুধ খেতে হচ্ছে। দুপুরে বেশিরভাগ দিনই ডিম দেওয়া হয়। মাছ দিলেও ছোট। ভাতের পরিমাণও কম। এ সব দেখা উচিত।’’ গত সোমবার থেকে ভর্তি ডিমৌলির দেবাশিস রায়েরও অনুযোগ, ‘‘যতটা ভাত দেয় তাতে পেট ভরে না। ডিম দিলেও অধিকাংশ দিনই মাছ দেয় না।’’ আর সপ্তাহ খানেক ভর্তি থাকা আয়মার বাসিন্দা দেবাশিস রায়ের কথায়, ‘‘খাবার কোনও রকমে মুখে তুলি। ভাত বাড়ি থেকে আনতে হয়। রুটি তো একেবারে কাঁচা থেকে যায়।’’

•এই হাসপাতালের উপর ১০টি ব্লকের মানুষ নির্ভরশীল

•২৭২ শয্যা, গড়ে রোগী ভর্তি ৩৫০

•খাবারের জন্য দিনে রোগী পিছু বরাদ্দ ৪৮.৮০ টাকা

•দিনে রোগী পিছু তিনবার খাবার দেওয়া হয়

•খাবারের পরিমাণ ও মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে

•নিয়মিত নজরদারি চালানো হয় না, মানছেন সুপারও

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল দাঁতন, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, খড়্গপুরের দু’টি ব্লক-সহ ১০টি ব্লকের মানুষ। শয্যা সংখ্যা ২৭২টি হলেও রোগী ভর্তি থাকে গড়ে সাড়ে তিনশো জন। এই হাসপাতালে রোগী পিছু খাবারের জন্য বরাদ্দ ৪৮ টাকা ৮০ পয়সা। খাবার সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থার অভিযোগ, এত কম টাকায় খুব কষ্টে খাবার জোগান দিতে হয়। ঠিকাদার সংস্থার মালিক প্রশান্ত ঘোষের কথায়, ‘‘আসলে ৪৮ টাকায় কী ভাবে খাবার দেব বুঝে পাই না। নিজের পুকুরের মাছ থাকায় কোনও রকমে চালিয়ে যাচ্ছি।’’ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় নিজেও মানছেন, ‘‘৪৮ টাকায় তিনবেলা খাবার দেওয়া সত্যিই অসম্ভব।’’

তবে হাসপাতালেরই একাংশ কর্মীর দাবি, দিনে গড়ে ৩০ শতাংশ রোগী খাবার নেন না। সেই টাকা বাঁচিয়ে ভাল খাবার দেওয়া সম্ভব। এমনকী রোগী প্রতি ৪৮ টাকা ছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে ৯ জন কর্মীর টাকা আলাদা ভাবে দেওয়া হয়। ফলে, অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের হাসপাতাল শাখার উপদেষ্টা দিলীপ সরখেল বলেন, “হাসপাতালে খাবারের মান নিয়ে প্রতিদিনই রোগীদের নানা অভিযোগ আমাদেরও শুনতে হয়। এর প্রধান কারণ, এই হাসপাতালে খাবার পরীক্ষার জন্য যে দলটি রয়েছে তাঁরা প্রতিদিন নজরদারি চালায় না।’’ এ ক্ষেত্রে গাফিলতি মানছেন খড়্গপুর হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর বক্তব্য, “এটা ঠিক রোজ খাবার পরীক্ষা করা হয় না। তবে এ বার নির্দেশ এসেছে। নিশ্চয়ই নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement