boat

Flood in Digha: সমুদ্রে বিকল ট্রলার, সেই জলযান নিয়েই অলৌকিক অভিযান নামখানার মৎস্যজীবীদের

দিঘার মোহনায় থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার এবং অন্য মৎস্যজীবীরা ওই ছ’জনকে উদ্ধার করেন। তাঁদের দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

সুমন মণ্ডল 

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:১৯
Share:

তখন দিঘার মোহনায় ট্রলার থেকে মৎস্যজীবীদের উদ্ধারকাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র

ঢেউয়ের ধাক্কায় মাঝসমুদ্রে বিকল ট্রলার। প্রাণ বাজি রেখে সেই ট্রলার নিয়েই পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘার মোহনায় ভিড়লেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার ছয় মৎস্যজীবী। বিকল জনযান নিয়ে অলৌকিক অভিযানের সাক্ষী হলেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে দিঘার মোহনায় থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার এবং অন্য মৎস্যজীবীরা ওই ছ’জনকে উদ্ধার করেন। তাঁদের দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

গত শনিবার ওই ট্রলারটি নিয়ে নামখানার ছয় মৎস্যজীবী গভীর সমুদ্রে রওনা দিয়েছিলেন মাছ ধরতে। ভক্ত বর্মণ, স্বপন মণ্ডল, প্রশান্ত মণ্ডল, খুরশেদ খান, সাইফুদ্দিন মোল্লা এবং পঞ্চানন মুনিয়ারা এর আগেও একাধিক বার সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন। বিপদের মুখেও পড়েছেন অনেক বার। তবে সে সব তাঁদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার যে এমন কাণ্ড ঘটবে তা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি।

সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার পর দিন অর্থাৎ রবিবার আবহাওয়া দফতর জানায়, পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নামখানার ওই মৎস্যজীবীদের তীরে ফিরে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, তাঁরা ততক্ষণে সমুদ্রের গভীরে ঢুকে পড়েছিলেন। মাথার উপর মেঘলা আকাশ, টানা বৃষ্টি। এর মাঝেই বিপদ বাড়িয়ে দেয় ট্রলারের যান্ত্রিক গোলযোগ। স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে সংযোগকারী পাখাটি আচমকা বিকল হয়ে পড়ে। ফলে মাঝসমুদ্রে ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

Advertisement

কিন্তু কোনও ভাবেই হাল ছেড়ে দেননি ওই মৎস্যজীবীরা। দাঁড় টেনেই তাঁরা পাড়ে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু উত্তাল সমুদ্রে দিক হারিয়ে ফেলেন। অসম লড়াই জেনেও, গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সমুদ্রের সঙ্গে অক্লান্ত যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছেন ওই ছ’জন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সফল হন। মঙ্গলবার তাঁরা তীর দেখতে পান। কিন্তু ঢেউয়ের ধাক্কায় তাঁদের ট্রলার নামখানার বদলে গিয়ে পৌঁছয় দিঘা উপকূলের কাছে। প্রাণে বাঁচার সেই লড়াইয়ের কথা শোনালেন ওই দলে থাকা স্বপন মণ্ডল নামে এক মৎস্যজীবী । তিনি বললেন, ‘‘সমুদ্রে ইঞ্জিন চালু হচ্ছিল না। ফলে আমরাও নৌকা ঘোরাতে পারছিলাম না। নৌকায় আমরা ছ’জন ছিলাম। আমরা বেশ কয়েক ঘণ্টা হাল দিয়ে নৌকা টেনেছি।’’

মঙ্গলবার ছিল ষাঁড়াষাঁড়ির কটাল। ভরা জোয়ারে তীরে এসেই ট্রলার ডোবার উপক্রম হয়। বেগতিক দেখে ওই ছয় জন ট্রলার থেকে সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। তত ক্ষণে ওই ছ’জনকে দেখতে পান উপকুলে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার এবং অন্যান্যরা। তাঁরা বেশ কিছু ক্ষণের চেষ্টায় ওই ছয় জনকে উদ্ধার করেন।

ঠেউয়ের ধাক্কায় ভেঙে যাওয়া ট্রলার। নিজস্ব চিত্র

ট্রলারটিকে বাঁচাতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন নামখানার মৎস্যজীবীরা। তাঁদের তড়িঘড়ি দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আপাতত তাঁরা সুস্থ রয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের ট্রলারটিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ঢেউয়ের ধাক্কায় তা ভেঙে চৌচির হয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement