—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বিধানসভায় পেশ হয়েছে রাজ্যের বাজেট। সেখানে যে সব ঘোষণা হয়েছে, তাতে হাসি ফুটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মৎস্যজীবীদের মুখে। তাঁদের জন্য চালু হচ্ছে ‘সমুদ্র সাথী’ প্রকল্প। এতে মিলব আর্থিক সাহায্য। আর শাসকদলের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের বৃহস্পতিবারে এই ঘোষণায় রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুর যেমন উপকূলের জেলা, তেমনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের ‘গড়’ও বটে। লোকসভা ভোটের আগে এই জেলার মৎস্যজীবীদের এভাবে ‘উপহার’ দেওয়া ভোট ব্যাঙ্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচুর মৎস্যজীবীর বাস। যাঁদের অধিকাংশই থাকেন কাঁথি মহকুমা এলাকায়। এই মহকুমায় ৪০টির বেশি খটি রয়েছে। সেখানের লক্ষাধিক মৎস্যজীবী সমুদ্রের মাছে নির্ভরশীল। সমুদ্রে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ঘটাতে গত কয়েক বছর ধরে ‘ব্যান পিরিয়ড’ চালু করেছে কেন্দ্র সরকার। নিয়ম অনুযায়ী, ৬০ দিন সমুদ্রে কোনও ট্রলার মাছ ধরতে যায় না। এই সময়ে মৎস্যজীবীরা কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েন। এই ব্যান পিরিয়ডে মৎস্যজীবীদের পরিবার কিছু এককালীন আর্থিক সাহায্য দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে অন্য রাজ্যে। এ রাজ্যে তেমন কোনও প্রকল্প ছিল না।
এ দিনের রাজ্য বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে, যে দু’মাস মাছ ধরতে যাওয়া হয় না, সেই সময়ে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে প্রত্যেক মৎসজীবীকে দেবে রাজ্য। এ ব্যাপারে খুশি মৎস্যজীবীরা। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলছেন, ‘‘দীর্ঘদিনের লাগাতার আন্দোলনের সুফল এটি। নিষিদ্ধ সময়ে কর্মহীন মৎস্যজীবীদের পাশে থাকার যে উদ্যোগ রাজ্য সরকার নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’’
কাঁথি শুভেন্দুর নিজের বাড়ির এলাকা। সেখানের মৎস্যজীবীদের জন্য লোকসভা ভোটের আগে এমন ঘোষণা করছে তৃণমূল সরকার। পঞ্চায়েত ভোটে শুভেন্দুর জেলায় বিজেপি ভাল ফল করেছে। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, লোকসভা ভোটের আগে তাই মৎস্যজীবীদের পাশে পেতে চাইছে তৃণমূল। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলও বলছেন, ‘‘এটা ভোটমুখী বাজেট। অন্য রাজ্যগুলিতে নিষিদ্ধ সময় মৎস্যজীবীদের আর্থিক সহযোগিতা আগেই দেওয়া হয়।’’
পূর্ব মেদিনীপুরে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। লকডাউন পর্বে তাঁরা জেলায় ফিরেছিলেন। সেই সময় থেকেই তাদের প্রতি রাজ্য সরকারের বঞ্চনা নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংগঠনগুলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পের আওতায় আনার প্রস্তাব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের এমন ঘোষণায় খুশি পরিযায়ী শ্রমিকেরা। এ প্রসঙ্গে ‘অল ইন্ডিয়া মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র জেলা কমিটির উপদেষ্টা নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেছেন, ‘‘যাতে দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় এবং পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে গিয়েও স্বাস্থ্য সাথীর সুবিধে পেতে পারেন, তার বন্দোবস্ত করা হোক।’’
বাজেটে হাসি ফুটেছে সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ, গ্রিন পুলিশ কর্মীদের মুখেও। তাঁদের মাসিক বেতন এক হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কাঁথি থানার এক সিভিক ভলেন্টিয়ার বিশ্বজিৎ দাস বলছেন, ‘‘ভীষণ খুশি। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তাতে কৃতজ্ঞ।’’ একশো দিনের কাজের প্রান্তিক শ্রমিকদের জন্য ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। তা শুনে কাঁথি-৩ ব্লকের বাসিন্দা মন্মথ জানা নামে এক জব কার্ড প্রাপক বলছেন, ‘‘দু'বছর আগে কাজ করেও টাকা মেলেনি। আর কাজও পাইনি। এখন যদি বকেয়া টাকা পাই, আর নতুন করে কাজও পাই, তাহলে সংসার চালানো সহজ হবে।’’
লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য সরকারের এমন কল্পতরু অবতারের কটাক্ষ করছে বিজেপি। দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর বলছেন, ‘‘বাজেটে যা যা বলা হয়েছে, তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না দেখার।’’ যদিও জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘কয়েকদিন আগে কেন্দ্রের একটা সরকার বাজেট ঘোষণা করেছে। তাতে গরিবের জন্য কিছুই উল্লেখ ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব স্তরের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।’’