বেলপাহাড়ির পাহাড়-জঙ্গলের এই পরিবেশই চেনা ঠেকছে বাঘেদের। ফাইল ছবি।
প্রকৃতি অনেকটা এক। খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব নেই। তাই ঝাড়খণ্ড বা ওড়িশা থেকে বাঘেরা চলে আসছে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে। এমনটাই মনে করছেন বনকর্তারা।
কিন্তু প্রশ্ন হল ভিন্ রাজ্যের অভয়ারণ্যের নিরাপদ বাসস্থান ছেড়ে কেন পরিযায়ী হচ্ছে বাঘেরা? কারণ, অভয়ারণ্যে তো আর খাদ্যের অভাব নেই। এ ক্ষেত্রে এ রাজ্যের বনকর্তাদের বক্তব্য, অভয়ারণ্যে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। কারণ, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্যের জোগানে টান পড়বে। সে ক্ষেত্রে ভূপ্রকৃতিগত মিল রয়েছে এমন জায়গায় বাঘের চলে আসাটা অস্বাভাবিক নয়। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার দীর্ঘ কয়েক দশক ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া জেলায় কাজ করেছেন। সমীরের পর্যবেক্ষণ, ওড়িশার সিমলিপাল এবং ঝাড়খণ্ডের দলমা ও হাজারিবাগের জঙ্গল থেকে বাঘ আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বাঘ সাধারণত পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং আশ্রয়ের খোঁজে ঘন জঙ্গলের ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার বা তার বেশি এলাকা জুড়ে বিচরণ করে। বনকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, হয়তো গভীর জঙ্গলে ঘোরাফেরা করে ফের ফিরে যাওয়ায় বাঘের পায়ের চিহ্ন দেখা যায়নি। তাই বিষয়টি নিয়ে হইচইও হয়নি। ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের ডিএফও সাব্বা আহমেদ বলছেন, “প্রতিটি ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। সম্ভবত সেই কারণে হয়তো বাঘেরা তাদের এলাকা বাড়াতে অন্যত্র যাচ্ছে।” ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত বছর ফেব্রুয়ারির সমীক্ষা অনুযায়ী সিমলিপাল অভয়ারণ্যে ২৭ টি বাঘ রয়েছে। বাঘ এলাকা বাড়াচ্ছে কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলার জন্য আরও পর্যবেক্ষণ জরুরি।
পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে পড়শি দুই রাজ্যের জঙ্গলের বাঘেরা মানুষ ও লোকালয় এড়িয়ে চলে। জঙ্গলে মানুষের গতিবিধি বাড়লে বাঘও জঙ্গলের স্থান পরিবর্তন করে। প্রাক্তন বন কর্তা সমীর মজুমদার বলছেন, "সিমলিপালে এখন প্রচুর পর্যটক যান। জঙ্গলপথে গাড়ির সংখ্যা ও মানুষের আনাগোনা অনেক বেড়েছে।
এটিও বাঘের অন্যত্র যাওয়ার একটি কারণ হতে পারে।" পুরুলিয়া জেলার কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলছেন, “বান্দোয়ানের দুর্গম রাইকা পাহাড়ের সঙ্গে লাগোয়া বেলপাহাড়ির পাহাড়ি এলাকার ভীষণ রকম সাদৃশ্য রয়েছে। ওই পাহাড়ি জঙ্গলে প্রচুর বন শুয়োর, জংলি খরগোশ ও হরিণ আছে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে পর পর দুটি পর্যায়ে কাঁকড়াঝোর, ভুলাভেদা ও বেলপাহাড়ির জঙ্গলে ৩২ টি হরিণ ছাড়া হয়েছিল। সেই হরিণের বংশবৃদ্ধির ফলে ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া জেলার সীমানাবর্তী ওই জঙ্গলে হরিণ আছে।
রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) সিঙ্গরম কুলন্দাইভেল বলছেন, “বাঘ বাসস্থান পরিবর্তন করছে কি না সেটা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া জেলার দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গল এলাকা গুলিতে বাঘেদের থাকার মতো পরিবেশ রয়েছে।”