প্রতীকী ছবি।
আপত্তি ছিল পরিবারের। কিন্তু মেয়ের নাছোড় মনোভাবের কাছে হার মানেন বাবা। ভেবেছিলেন মেয়ে সুখী হবে। কিন্তু কালীপুজোর দিন মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বাবা তাপস দাস ভাবছেন সেদিন মেয়ের মতে সায় না দিলে আজ হয়তো মেয়েকে জীবিতই দেখতে পেতেন।
শনিবার বিষ্ণুরামচকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুমনা দাস হালদারকে (২০) হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত পণের দাবি না মেটানোয় তাঁর মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেরে ফেলেছেন বলে ইতিমধ্যেই হলদিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সুমনার স্বামী রণজিৎ ও শ্বশুর তাপস হালদারকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সুমনার দেহের ময়না তদম্ত হয়। সুমনার ১৩ মাসের একটি শিশু সন্তানও রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১৭ সালের অগস্ট মাসে রণজিতের সঙ্গে বিয়ে হয় একই গ্রামের বাসিন্দা সুমনার। রণজিতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুমনা। বাড়ির অমতে দু’জনে বিয়ে করলেও শেষ পর্যন্ত মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন বাবা-মা। প্রেমের বিয়ে হলেও বিয়ের পর থেকেই সুমনার শ্বশুরবাড়ি থেকে অতিরিক্ত টাকা এবং সোনার গয়না দাবি করে তাঁকে মারধর করা হত বলে অভিযোগ। সুমনার বাবার অভিযোগ, বিয়েতে সাধ্যমত যৌতুক দিলেও আরও পণ চেয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হত সুমনাকে। সুমনার মায়ের অভিযোগ, আগেও একাধিকবার খুন করার চেষ্টা হয়েছে মেয়েকে। দিন পনেরো আগে রান্নার গ্যাসের পাইপ খুলে রাখায় মেয়ের গায়ে আগুন লেগে তাঁর চুল পুড়ে যায়। সুমনা ঘটনার কথা না জানালেও পরে তাঁরা সব জানতে পেরেছিলেন। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন করে জানানো হয়, সুমনা গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা গিয়ে দেখেন সুমনা বেঁচে নেই।
তবে সুমনার মৃত্যু ঘিরে তাঁকে যৌন হেনস্থার অভিযোগও উঠেছে। সুমনার শ্বশুরবাড়ির পাড়ার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘সুমনার শ্বশুর তাপস হালদারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও তা থানা পর্যন্ত গড়ায়নি।’’ সুমনার মৃত্যুর পিছনে তেমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনের সন্দেহ।
অভিযোগ অস্বীকার করে সুমনার শাশুড়ি কল্যাণী হালদারের দাবি, ‘‘ছেলে-বৌমা প্রেম করে বিয়ে করেছিল। তাই পণ নেওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না। বৌমার শরীর খারাপ ছিল। হাসপাতালে নিয়ে যেতে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।’’ হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই মহিলার বাপের বাড়ির তরফে অভিযোগ পেয়ে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রকৃত কী ঘটেছে তা তদন্তের পরে বোঝা যাবে।’’
দিদি নেই, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ষষ্ঠ শ্রেণির শুভজিতের। সুমনাও তাঁর ভাই এবং কাকার দুই ছেলেকে ভাইফোঁটায় উপহার দেওয়ার জন্য তিনটে জামা কিনেছিলেন। ভাইফোঁটায় দিদির কাছ থেকে নতুন জামা পাওয়ার আনন্দে বিভোর ছিল শুভজিৎ। কিন্তু পড়ে রইল সবই। দিদি তার কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে আর বলবে না ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা’। কারণ, দিদিই যে আর নেই।